Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যেভাবে মাইক্রোসফটকে ছাড়াল অ্যাপল

micro appleপ্রান্তিক মুনাফায় রেকর্ড গড়েছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। এ অর্জন এখন আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে যে কোম্পানিটি একটুর জন্য দেউলিয়া হয়নি, বাজার দখলে সেটি এখন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। কয়েক বছর আগেই পেছনে ফেলেছে একসময়ের তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটকে। অ্যাপল যেভাবে মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলল তা বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

১৯৯৯ সালে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ছিল যখন ৬২ হাজার কোটি ডলার, তখন অ্যাপল ছিল দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। মাইক্রোসফটকে ছাড়িয়ে অ্যাপলের বাজারমূল্য দ্বিগুণ হবে— এ ধারণাই সে সময় হাস্যকর মনে হতো। অথচ এখন অ্যাপলের বাজারমূল্য ৬৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা মাইক্রোসফটের বর্তমান বাজারমূল্যের (৩৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার) প্রায় দ্বিগুণ। বাজার পরিস্থিতি, কোম্পানিগুলোর পণ্যের ভিন্নতা ও দূরদর্শিতাই এ বিশাল ফারাক তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

chardike-ad

গত মঙ্গলবার অ্যাপল আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিমোথি ডি কুক সর্বশেষ প্রান্তিককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সময়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩৪ হাজারের বেশি আইফোন বিক্রি করে অ্যাপলের নিট মুনাফা ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আর রাজস্ব ছিল সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলার। সর্বশেষ প্রান্তিকে অ্যাপলের নগদ প্রবাহ ছিল ৩ হাজার কোটি ডলার। যা আইবিএমের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের পুরো বছরেরই নগদ প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিতে বেশকিছু পরিবর্তনের দিকে নজর দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম অপারেটিং সিস্টেমের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বের পরিমাণ অ্যাপলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ সময়ে মাইক্রোসফটের পরিচালন আয় ছিল ৭৮০ কোটি ডলার। যা অ্যাপলের পরিচালন আয়ের এক-চতুর্থাংশেরও কম।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এক দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। মাইক্রোসফট একসময় তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ওপরই নির্ভর করে ব্যবসা করেছে। একইভাবে অ্যাপলও কেবল আইফোনের ওপর নির্ভর করে এখনো ব্যবসা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ৬৯ শতাংশ রাজস্ব আসে আইফোন বিক্রি থেকে। তাদের পরামর্শ, কোনো প্রতিষ্ঠানকে বড় হতে হলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হয়। সেক্ষেত্রে অ্যাপল ও মাইক্রোসফট উভয়েরই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অ্যাপলের লক্ষ্যের কার্যকারিতা বাড়লেও পিছিয়ে পড়ে মাইক্রোসফট। সবার ডেস্কে একটি করে কম্পিউটার থাকবে— এমন লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল মাইক্রোসফট। অ্যাপলের লক্ষ্য ছিল প্রত্যেকের পকেটে একটি কম্পিউটার পৌঁছে দেয়া। ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট যে হারে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়, অ্যাপলকে পকেটভিত্তিক কম্পিউটার সরবরাহ করতে প্রাথমিক পর্যায়ে একই হারে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়নি।

অ্যাপলের সাফল্য নিয়ে বলেছেন তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক ওয়ালটার আইজাকসন। তিনি অ্যাপলের প্রয়াত সিইও স্টিভ জবসের জীবনী প্রকাশে সাক্ষাত্কার নেন। আইজাকসন বলেন, ‘জবস অনেক আগেই বুঝতে পারেন ভবিষ্যতের পৃথিবী বহনযোগ্য প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকবে। আর এ ধরনের ধারণা থেকেই তিনি কম্পিউটারের চেয়ে মোবাইল ডিভাইসে মনোনিবেশ বাড়ান। পণ্যের মানের পাশাপাশি এর নকশাও গ্রাহক আকর্ষণ করতে বড় ধরনের প্রভাব রাখে বলে মনে করতেন জবস। এত দিন পর জবসের ধারণাই সঠিক হয়েছে। আর তাতেই এগিয়ে যাচ্ছে অ্যাপল।’ আইজাকসন জানান, মোবাইল ডিভাইসের বাজারেও এখন যে প্রতিযোগিতা নেই তা নয়। এ বাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। মোবাইল ডিভাইসের বাজারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপলের আইওএসচালিত ডিভাইসগুলো।

উদ্ভাবনী ক্ষমতায়ও মাইক্রোসফটের তুলনায় অ্যাপলকে এগিয়ে রাখেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, পণ্য বা সেবায় ভিন্নতা আনতে অ্যাপলের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না মাইক্রোসফট। তবে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ার কারণে অ্যাপলের জন্য ব্যবসা দিন দিন কঠিন হয়ে আসছে। আর নকিয়াকে কেনার পর উইন্ডোজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও মোবাইল ডিভাইসের বাজারে আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত বাজার প্রবণতার ওপরই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। যারা ভবিষ্যৎ ক্রেতা চাহিদা অনুমান করতে পারবেন তারাই জয়ী হবেন।