গরুতে ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ১৯৯৭ সালে ফাইভ মার্ডারের ঘটনায় ১৩ জনকে যাবজ্জীবন ও দুই জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ময়মনসিংহের বিশেষ দায়রা জজ আদালত।
বুধবার দুপুরে দীর্ঘ ১৯ বছর পর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ড. মোহাম্মদ আমীর উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় ১০৭ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে এবং বাকিদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৪ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে এবং ৭ জন এখনো পলাতক রয়েছে।
মামলার রায়ে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে গরু ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে হালুয়াঘাট উপজেলা সদরের গরুহাটা গোপীনগর এলাকায় জালাল উদ্দিনের সাথে হোসেন আলী মন্ডলের বাকবিতণ্ডা, ঝগড়াঝাটি ও চার দফা গ্রাম্য সালিশ হয়। এতেও সুরাহা না হওয়ায় ৯ মে হোসেন আলী মন্ডলের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শতাধিক এলাকাবাসী জালাল উদ্দিনের বাড়ির ৫টি ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এসময় জালাল উদ্দিনের ভাই আব্দুল মোতালেবকে (৪২) কুপিয়ে জখম করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় এবং জালাল উদ্দিনের বড় ভাই নুরুল ইসলাম (৬০), ছোট ভাই আব্দুর রশিদ (৪৫), ভাতিজা সাজাহান (২৬) ও একমাত্র ছেলে আলমগীরকে (১৮) রামদা, বল্লম, কিরিজ ও ছুঁড়ি দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পাওয়া জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে পরদিন হালুয়াঘাট থানায় ১০৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে বিভিন্ন সময় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হোসেন আলী মন্ডলসহ এক’শ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
এরপর সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দীর্ঘ ১৯ বছর আদালত ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং দুইজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে এই রায় ঘোষণা করেন বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো- হালুয়াঘাট উপজেলা সদরের গরুরহাটা গোপীনগর এলাকার হোসেন আলীর ছেলে হক মিয়া, আকবর আলীর ছেলে সিরাজুল, মানিক ও আজিজুল, ওমেদ আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার, বারেক, নুর মোহাম্মদ ও কাসেম, আব্দুল হেকিম মুন্সীর ছেলে ফজলুল করিম, আবু তাহের ওরয়ে নকুল ও আবুল খায়ের, সোবহানের ছেলে গফুর উদ্দিন এবং আব্দুল হেকিমের ছেলে রমজান।
১০ বছর সাজাপ্রাপ্তরা হলো-জসিম উদ্দিন ওরফে জসু ও আব্দুর রাজ্জাক।