Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাহারি নামে ক্রিকেট তারকারা

cricketerশহীদ আফ্রিদির ‘বুম বুম’ নামটাই বলছে কতটা আক্রমণাত্মক তিনি। তেমনি মাশরাফি বিন মর্তুজার ‘নড়াইল এক্সপ্রেসে’ বোঝা যায় গতির ঝড়টা ভালোই তোলেন বাংলাদেশি অধিনায়ক। এ ধরনের ডাকনাম আছে এবারের বিশ্বকাপ খেলা অনেক ক্রিকেটারেরই। জেনে নেওয়া যাক সেই নামগুলো।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ চলছে। ধারাভাষ্যে রমিজ রাজা বিস্ময়করভাবেই পড়লেন ওপেনার এনামুল হককে নিয়ে। তাঁর পাশে মাইক্রোফোন হাতে সৌরভ গাঙ্গুলি। অদ্ভুতভাবেই রমিজ বলে উঠলেন, ‘বাংলাদেশি প্রায় সব ক্রিকেটারের বাড়তি একটা নাম আছে। এনামুল হকেরই আরেকটা নাম বিজয়। কি অদ্ভুত?’ সৌরভ সঙ্গে সঙ্গেই জানালেন, ‘বিজয় মানে ইংরেজিতে ভিক্টরি। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে জন্ম বলেই এই নাম তাঁর।’ এরপর চুপসে যান রমিজ।

chardike-ad

রমিজের মতো আরও অনেকে বুঝে-না বুঝে চমকে যেতে পারেন এবারের বিশ্বকাপে খেলা ক্রিকেটারদের ডাক নাম শুনে। আরব আমিরাতের কৃষ্ণ চন্দ্রনের জার্সিতে লেখা ‘কারাতে’। তাহলে কি ২৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার মার্শাল আর্ট ভক্ত? মোটেও না। তাঁর ভারতীয় মায়ের পরিবারের পদবি এটা। আরব আমিরাতের হয়ে খেললেও কৃষ্ণ চন্দ্রনের জন্ম ভারতে। তিনি চাকরি করেন দুবাই বিমানবন্দরে। ভারতের জাতীয় দলে খেলা সম্ভব নয় ভেবেই আরব আমিরাতের হয়ে খেলতে রাজি হয়েছেন কৃষ্ণ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নেলসনে ব্যাট হাতে ৩৪ রান করার পাশাপাশি ১ উইকেট নিয়ে নিজের ক্রিকেট প্রতিভাই মেলে ধরেছেন এই তরুণ।

মিসবাহ-উল-হকের নাম হয়ে গেছে ‘টুকটুক’। ওয়ানডেতে প্রচুর বল নষ্ট করেন বলেই এমন নাম। এবারের বিশ্বকাপেই শোয়েব আখতার বিরক্ত হয়ে বলেছেন, ‘যেমনই বল দেন মিসবাহ ঠেকাবে সেটা। গ্যাপ খুঁজে পাবে না ও। ওর মতো কাপুরুষ আর স্বার্থপর ক্রিকেটার দেখিনি আমি।’ এই টুকটুক মিসবাহরই রয়েছে আবার অবিশ্বাস্য এক কীর্তি। টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিটা তাঁরই। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে ২০১৪-১৫ মৌসুমে দুবাইয়ে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। মিসবাহর মতই ওয়ানডেতে ‘ধরে’ খেলার জন্য বিখ্যাত পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ। বিশ্বকাপ খেলতে নিউজিল্যান্ডে এসেও ফিরে যাওয়া সেই হাফিজকে ডাকা হয় ‘প্রফেসর’ নামে।

নাম দেখে যায় চেনার মতো শহীদ আফ্রিদির ‘বুম বুম’ নামটাই বলছে কতটা মারকুটে তিনি। ১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন আফ্রিদি। ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির এই রেকর্ড টিকে ছিল ১৮ বছর। তবে ছক্কার রেকর্ডটা এখনো এই পাকিস্তানিরই। ৩৯৫ ওয়ানডেতে আফ্রিদির ছক্কা ৩৪৮টি। দ্বিতীয়স্থানে থাকা সনৎ জয়াসুরিয়ার ছক্কা ৪৪৫ ম্যাচে ২৭০। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন ‘বুম বুম’ ডাকা হয় আফ্রিদিকে।

কোরে অ্যান্ডারসনের ৩৬ বলের পর মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করে আফ্রিদির রেকর্ড ভেঙেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। তাঁর ডাক নাম আবার তিনটি। কেউ ডাকেন এবি, কেউ মিস্টার ৩৬০ কেউবা মিস্টার অসম। যেকোনো বোলিং দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারেন বলেই এমন নাম। ডি ভিলিয়ার্সের দলের বোলিং কোচ ও সাবেক কিংবদন্তি পেসার অ্যালান ডোনাল্ডের গতির জন্য নামই হয়ে যায় ‘সাদা বিদ্যুৎ’।

ডোনাল্ডের উত্তরসূরি ডেল স্টেইনকে বলা হচ্ছে সময়ের সবচেয়ে দ্রুততম পেসার। বন্দুকের গুলির মতো গতির জন্য কেউ কেউ কেউ তাঁকে ডাকেন ‘স্টেইনগান’। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই পেসারের পরিচিতি ‘হুলিও’ নামেও।

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের আদুরে নাম ‘পাপ’। এই পাপের অর্থ কিন্তু কুকুরছানা! গত আইপিএল মাতান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ব্যাট করছেন যেন খোলা তরবারি হাতে। আইপিএল নিলামে দামটা ১ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে এই অস্ট্রেলিয়ানের নাম হয়ে গেছে ‘বিগ শো’। এমন নামে অবশ্য বিব্রতই হন তিনি। আগুনে বোলিংয়ে বিপক্ষকে ছারখার করায় জুড়ি নেই মিচেল জনসনের। ‘গোঁফ’ রেখে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা এই অস্ট্রেলিয়ান পেসারের ডাক নাম ‘মিজ’ বা পতঙ্গ!

চার বলে চার উইকেটের কীর্তি আছে লঙ্কান লাসিথ মালিঙ্গার। ছোটখাটো উচ্চতার জন্য ঝাঁকড়া চুলের এই পেসারের নাম ‘পকেট রকেট’। মালিঙ্গা যেমন বল হাতে তোলেন গতির ঝড় তেমনি ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কিউই অধিনায়ক ম্যাককালামকে ডাকা হয় ‘বাজ’ নামে। এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র হ্যাটট্রিকটি ইংল্যান্ডের স্টিভেন ফিনের। লম্বা এই পেসারের পরিচিতি ‘দ্য ওয়াটফোর্ড ওয়াল’।

শচীন টেন্ডুলকারের ‘ক্লোন’ বলা হতো বীরেন্দর শেবাগকে। আর বিরাট কোহলিকে বলা হচ্ছে টেন্ডুলকারের যোগ্য উত্তরসূরি। টেস্টে তাঁর ছেড়ে যাওয়া চার নম্বরেই নামছেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই ‘বিরাট’ নক্ষত্র। কেউ বিরাট কেউবা কোহলি নামে ডাকলেও দিল্লি রাজ্য দলের কোচ অজিত চৌধুরী ডাকতেন ‘চিকু’ নামে। সেই থেকে ২৬ বছর বয়সী এই তারকার ডাক নাম চিকু। ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ডাকা হয় ‘মাহি’ নামে। শত ঝড় ঝাপ্টার পরও মাথাটা ঠাণ্ডা রাখায় অনেকে ডাকেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামেও। এই ধোনির কল্যাণেই রবিন্দ্র জাদেজা হয়ে উঠেছেন ‘স্যার’।

শুরুটা হয়েছিল এনামুল হককে দিয়ে। শেষটাও বাংলদেশি ক্রিকেটারদের দিয়েই হোক। রমিজ রাজা ভুল বলেননি খুব একটা। আলাদা ডাক নাম আছে দলের প্রায় সব ক্রিকেটারেরই। দুরন্ত গতির জন্য অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার পরিচিতি ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। ‘কৌশিক’ নামেও অনেকে ডাকেন বাংলাদেশি অধিনায়ককে। সাবেক সহ-অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহর ডাক নাম রিয়াদ। সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ডাক নাম মিতু, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সকিব আল হাসানের ডাক নাম ফয়সাল, তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদের তাজিম, অলরাউন্ডার সৌম্য সরকারের ছোটবাবু, মিডলঅর্ডার মমিনুল হকের সৌরভ। বিচিত্র সব নামের এই ক্রিকেটাররা সাফল্যের সৌরভ ছড়াবে বিশ্বকাপে-এমন প্রত্যাশাই সবার।