Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মানুষ কীভাবে বেশি দিন বাঁচে

life n healthমার্কিন গবেষকরা দাবি করছেন, দৈহিক গড়নে কিছুটা ছোট অর্থাৎ বেঁটে মানুষ সমবয়সী লম্বা মানুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। বেঁটে মানুষ বেশি দিন বাঁচে এ নিয়ে কুয়াকিনি হনলুলু হার্ট প্রোগ্রাম (এইচএইচপি) এবং কুয়াকিনি হনলুলু-এশিয়া এজিং স্টাডির উদ্যোগে গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষকরা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে খাটোদের এক দলে এবং ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি থেকে ৬ ফুট লম্বাদের আরেক দলে ভাগ করে পর্যবেক্ষণে রাখেন।

প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা জানান, মানুষ বেঁটে হয় জিনগত কারণে। আর বেঁটে মানুষের দেহে রয়েছে দীর্ঘায়ুর জিন ফক্স জিরো থ্রি। এ জিনটি কৈশোরেই মানুষকে লম্বা হতে বাধা দেয় এবং একই সঙ্গে আয়ুকে দীর্ঘ করে। তাছাড়া বেঁটে মানুষের রক্তের ইনসুলিন লেভেলও কম থাকে এবং ক্যান্সারের মতো রোগও কম হয়। সব মিলিয়ে বেঁটে মানুষ বাঁচে দীর্ঘদিন।

chardike-ad

গবেষকরা বলছেন, বেশি লম্বায় কম আয়ু আর কম লম্বা অর্থাৎ বেঁটেদের আয়ু বেশি হয়। যেমন জাপানের মানুষ কিছুটা বেঁটে বলেই তাদের আয়ু অনেক বেশি। গবেষক দলের অন্যতম হাওয়াই ইউনিভার্সিটির জন এ বার্নস স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ব্রাডলি উইলকক্স বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি, বেঁটে দলের লোকজন আয়ু বেশি পেয়েছে। আর বেঁটেদের বেশি আয়ুর সঙ্গে জড়িত এক ধরনের জিন।

স্ট্যানফোর্ড স্কুল অব মেডিসিন থেকে একটি সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, যারা জগিং করেন, তারা দীর্ঘদিন বাঁচেন। গবেষকরা কয়েকটি ‘রানিং ক্লাব’-এর ৫৩৮ জন সদস্য এবং ৪২৩ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেন। এদের সবার বয়স ছিল ৫০ এবং তদূর্ধ্ব। পর্যবেক্ষণ শুরুর ২১ বছর পর দেখা যায়, যারা জগিং করেন না, তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মারা গেছেন এবং জগিংকারীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশের। এছাড়া জগিংকারীদের মধ্যে হূদরোগ ও স্নায়বিক রোগ, সংক্রমণ ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যু কম ঘটেছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ যদি তার লক্ষ্য ঠিক করতে পারে, তাহলে সে আরো কয়েক বছর বেশি বাঁচবে সুন্দর এ পৃথিবীতে। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যহীন মানুষের তুলনায় জীবনে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রয়েছে এমন মানুষ দীর্ঘায়ু হয়। গবেষক দলের প্রধান কানাডার কার্লেটন ইউনিভার্সিটির ডক্টর প্যাট্রিক হিল বলেন, জীবনে নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া ও আকর্ষণীয় উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব।

গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের গবেষণার ফল অনুসারে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রবীণ বয়সেও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া সম্ভব। যে কোনো বয়সেই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে জীবন-আয়ুতে যোগ করে নেয়া সম্ভব আরো কয়েকটি বছর।

তবে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে দীর্ঘায়ুর ব্যাপারটি ঠিক কী কারণে জড়িত, সে বিষয় সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি গবেষকরা।

অস্ট্রেলিয়ায় এক দশক ধরে একদল গবেষক কিছু বয়স্ক মানুষের ওপর বন্ধুত্বের উপকারিতা বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে বন্ধুত্বের উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম বয়সে এবং বেশি বয়সে বন্ধুদের কাছে পেয়েছেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশ কয়েক বছর বেশি বাঁচেন। সুইডেনে এমন একটি জরিপে জানা গেছে, যারা সারা জীবন বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে জীবন কাটিয়েছেন, তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় বেশি ভালো থাকে। অনেক ছোট ছোট ব্যাপারও মনে রাখতে দেখা গেছে তাদের। এমনকি তাদের উপস্থিত বুদ্ধিও বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়। বন্ধুত্বের আরো কিছু ভালো দিকের কথাও বলেছেন গবেষকরা। পাশে কয়েকজন বন্ধু থাকলে অনেক কঠিন বিষয়কেই সহজ মনে হয়। কোনো বিপদে-কষ্টে-সমস্যায় বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করলেই মনের ভেতরের বোঝাটা যেন কোথায় হাওয়া হয়ে যায়। খুব কঠিন কাজও বন্ধুদের নিয়ে সহজে করে ফেলা যায়। বন্ধুত্বে মনের শক্তি বাড়ে। কয়েকজন ভালো বন্ধু থাকলে ভালো অভ্যাস গঠনে সুবিধা হয়।

আপনি অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরশীল হলে এরই মধ্যে আপনার পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর জগৎ অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এমনটি যদি না হতো, আপনি হয়তো আরো কিছুদিন বেশি বাঁচবেন, আপনার মস্তিষ্ক হতো আরো বেশি কার্যকর। এড়িয়ে যেতে পারতেন নানা মানসিক সমস্যা। কেননা প্রোবায়োটিকস আমাদের আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে তোলে।

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন রীতিতে কিছু পরিবর্তন এনে সহজেই ফিরে পেতে পারেন উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর জগৎ। আর এর মাধ্যমে রক্ষা পেতে পারেন আধুনিক জীবনে দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অনটারিওর মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও লসন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিউম্যান মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্রোবায়োটিকসের সভাপতি গ্রেগর রিড স্বীকার করেছেন, আধুনিক বিশ্বে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার অপরিহার্য। তিনি ও তার দল পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভারী পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বাড়ানোর উপায় অনুসন্ধান করছেন। আফ্রিকায় তারা এ নিয়ে চেষ্টাও চালিয়েছেন। রিড বলেন, ওই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক উপাত্ত এটাই জানায় যে, প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। সূত্রঃ বণিকবার্তা।