Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাতিল হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা !

muktijoddhaসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তান ও নাতি-পুতিদের প্রাপ্ত সুবিধা রহিত করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও এ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও সরকারের এ সিদ্ধান্তে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনটির পর্যালোচনা শেষে শিগগিরই এটি জাতীয় সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে নতুন এ আইনটির খসড়া পাঠানো হয়েছে। কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও করেছেন। অধিকাংশ সদস্যই আইনটির পক্ষে মত দিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু চাকরি কেন সব ক্ষেত্রেই তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে দেয়া উচিত। বর্তমান সরকার এটি করছেও। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততি কিংবা তাদের নাতি-পুতিদের কোটা সুবিধা দেয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে দেশের চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া এ সুযোগ নিয়ে অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে চাকরিতে কোটার সুবিধা নিচ্ছেন। তাই এটি বন্ধ হওয়া উচিত। তাদের অনেকে আবার শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের কোটা নয়, জেলা কোটাসহ সব ধরনের কোটা বাতিলেরও দাবি তোলেন।

chardike-ad

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক চাকরি বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রয়েছে ৩০ শতাংশ। এই কোটায় মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ও নাতি-পুতিরা সুবিধাদি পেয়ে আসছেন। এ ছাড়া জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটা রয়েছে ৫ শতাংশ। এতে মোট ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটায়। অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। এ কারণে মেধা থাকা সত্ত্বেও অনেক মেধাবী চাকরি বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার শুধু কোটার জোরে অনেক অমেধাবী চাকরি হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাবার যোগ্যতা কখনোই সন্তানের চাকরি পাওয়ার যোগ্যতার সার্টিফিকেট হতে পারে না। সংবিধানও এটা সমর্থন করে না। সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে’। ২৯ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জš§স্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেইক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’ তবে সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারে ফেলে দিয়ে তাদের ৩০ শতাংশ কোটা প্রদান করা হয়েছে। নতুন আইনে এসব বিষয় সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির প্রভাবশালী সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে যে কোটা রয়েছে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের ব্যাপারে যে কোটা মানা হচ্ছে এবং জেলাভিত্তিক যে কোটা অনুসরণ করা হচ্ছে সেটি উঠিয়ে দেয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাটি বড়জোড় সন্তান পর্যন্ত রাখা যেতে পারে কিন্তু নাতি কিংবা পুতিদের এসব সুবিধা দেয়া একেবারেই উচিত হবে না।

তবে বৈঠকে উল্টো মত দেন কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল করলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে এবং সারাদেশে সমভাবে উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, চাকরির কোটা সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই কোটা অনুসরণ করতে হয়। নতুন আইনে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের কোটা বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন তো আর মুক্তিযোদ্ধারা নেই। নাতি-পুতিরাই এ কোটায় সুবিধাদি নিচ্ছেন। কিন্তু তারা ৩০ শতাংশ কাভার করছে না। তবে জেলা কোটা রাখার পক্ষে মত দেন প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য জেলা কোটা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। তাই এটি বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সুত্রঃ মানব কণ্ঠ