দেশের মাটিতে ক্রিকেট দলগুলোর সিরিজ বয়কটের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান ক্রিকেটের মৃত্যু ঘটবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিস।
২০০৯ সালের পর পাকিস্তানে সিরিজ খেলা বন্ধ করে দিয়েছে ক্রিকেট দলগুলো। ফলে দেশের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না পাকিস্তান। ২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে সফররত শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় ৮ জন নিহত এবং সফরকারী দলের ৭ খেলোয়াড় আহত হন। তারপর থেকেই অন্যান্য দলগুলো পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে আসছে না।
আর এই ঘটনাই দেশের ক্রিকেটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তিান দলের কোচ ওয়াকার ইউনিস। তিনি বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে না। ফলে ছেলেদের এখন ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ক্রিকেটে জুনিয়ার পর্যায়ে প্রতিভার অভাব দেখা দিয়েছে। আর এই কারণেই দেশে ক্রিকেটের মৃত্যু ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওয়াকার। দেশে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথমসারির ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো অনেকদিন ধরেই পাকিস্তানে সিরিজ খেলছে না। গত বছর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেনিয়াকে এনে দেশে একটি সংক্ষিপ্ত একদিনের সিরিজ খেলানোর ব্যবস্থা করেছিল। এ বছরের মে মাসে জিম্বাবুয়েকে সফরে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
এ বারের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান। এই হারই দেশে ক্রিকেটের গঠন ও পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন একসময়ে নতুন বলে আগুন ঝরানো ফাস্ট বোলার।
ওয়াকার ইউনিস বলেছেন, পাক ক্রিকেটকে বাঁচাতে হলে ঘরোয়া লীগে খেলার মান বাড়াতে হবে। কারণ বিশ্বকাপে খেলার মানের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের মানের আসমান-জমিন পার্থক্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা অন্য দলগুলোর থেকে পিছিয়ে রয়েছি।
বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচের মাত্র ১টিতেই পাকিস্তান ৩০০-র বেশি রান করতে পেরেছিল। তাও আবার দুর্বল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। এরই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধান দুর্বলতা হিসেবে ব্যাটিংকে চিহ্নিত করেছেন ওয়াকার।
তিনি বলেছেন, পাক ক্রিকেটের আমূল সংস্কারের উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। অন্য দলগুলিতে যেমন পাওয়ার হিটার রয়েছে আমাদেরও তেমনই প্রয়োজন। এছাড়াও এমন ব্যাটসম্যান দরকার যারা ৩০০-র বেশি রান করতে সক্ষম।
ওয়াকার বলেছেন, এখন ক্রিকেট খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের তাল মেলাতে হবে।
পাকিস্তানের বোলিং নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন ওয়াকার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপে আমাদের বোলাররা গর্ব করার মতো বোলিং করেছে। কিন্তু ব্যাটিংটাই আমাদের দুর্বল জায়গা। বেশ কিছুদিন ধরে এই সমস্যা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মিসবাহ উল হক ও ইউনিস খান সরে গেল এক্ষেত্রে আরও বেশি শুন্যতা তৈরি হবে। তাই আমাদের ভালো ব্যাটসম্যান দরকার।
ওয়াকার আরও বলেছেন, শুধু বিশ্বকাপ জেতার জন্যই নয়, পাক ক্রিকেটের মান বাড়াতে এবং র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যেতে রদবদল খুবই জরুরী।
বোলিং অ্যাকশনের ব্যাপারে আইসিসির কড়া নিয়ম পাকিস্তানের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলেও দাবি করেছেন ওয়াকারের। তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিয়মের জালে সাঈদ আজমল এবং মোহাম্মদ হাফিজ অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য বহিস্কার হন।
ওয়াকার বলেছেন, এখন আমাদের উন্নতির পথে এগোতে হবে। কারণ ক্রিকেটটা আমাদের গর্বের বিষয়।