Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পেছনে আইসিসির কলকাঠি!

australia

পুরো টুর্নামেন্ট দুর্দান্ত খেলেছে নিউজিল্যান্ড। এমনকি অস্ট্রেলিয়াকে পর্যন্ত তারা গ্রুপ পর্যায়ে হারিয়েছে। কিন্তু আসল খেলা তথা ফাইনালে কেন তারা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল? এর পেছনে রয়েছে কুটিল রাজনীতি! কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকায় অশোক মলহোত্রর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখানে পুরোপুরি তুলে ধরা হলো।

chardike-ad

না, কোনও অঘটন নয়। বিশ্বের সেরা দলই বিশ্বকাপ জিতল।
কিন্তু এত একপেশে বিশ্বকাপ ফাইনাল! দেখে ভাল লাগল না।

মেলবোর্নের বিশাল মাঠ নিউজিল্যান্ড সামলাতে পারবে কি না, গত কয়েক দিন ধরেই মিডিয়াতে তা নিয়ে বিতর্ক চলছিল। বিতর্কটা যে মোটেই অমূলক নয়, তা তো এ দিন বোঝাই গেল।

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা সমানে বলে যাচ্ছিল যে তারা যেহেতু আগেও এখানে খেলেছে, তাই বড় মাঠ নিয়ে তাদের কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু তাদের বোধহয় মনে করানোর কেউ ছিল না যে ম্যাকালামরা যে ম্যাচগুলো খেলার অভিজ্ঞতা এই মাঠে রয়েছে বলে দাবি করছিল, সেগুলির কোনওটাই কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল না।

নব্বই হাজারেরও বেশি দর্শকে ভরা গ্যালারিতে বিশ্বকাপ ফাইনালের টেম্পারামেন্ট বজায় রেখে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো মোটেই সোজা নয়। সে আপনি যতই রাজা-উজির মেরে আসুন না কেন। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যারা, তাদের রক্তেও যে চ্যাম্পিয়নশিপের জিন রয়েছে, এটাও ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি।

নিউজিল্যান্ড ভাল দল, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আগের ম্যাচগুলো ওরা দুর্দান্ত খেলেছে, তাও ভুল নয়। কিন্তু ওরা আগের ম্যাচগুলো যে নিজেদের মাঠে খেলে এসেছে, এটা ভুলে গেলে চলবে কেন? ঘরের মাঠে টানা সাতটা ম্যাচ খেলে এসে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে সম্পুর্ণ অন্য একটা পরিবেশে গিয়ে সেখানকার সবচেয়ে বড় এবং দর্শকবহুল মাঠে খেলা এবং তাও বিশ্বকাপ ফাইনাল, অস্ট্রেলিয়াকেও যদি এই পরিস্থিতিতে পড়তে হত, তা হলে তারাও সমস্যায় পড়ে যেত। সেমিফাইনালের পরই তো লিখেছিলাম, নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হল বিশাল মাঠ এবং অচেনা পরিবেশ। দেখা গেল, সত্যিই এই দুটো সমস্যাই ওদের ফাইনালে শেষ করে দিল।

আসলে আইসিসি-র অদ্ভুত নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে এমন হাল হল কিউয়িদের। লিগ পর্যায়ের সব ম্যাচ নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাঠে খেলল। সব ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই যাবতীয় আয় ছাড়াও আইসিসি ও নিউজিল্যান্ড বোর্ড পুরো পয়সা তুলে নিল গেট সেল আর স্থানীয় স্পনসরশিপ থেকে। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনালও তারা তাদের দেশেই খেলবে, এমন ব্যবস্থাও করা হল। তাতে আরও বেশি ফায়দা। কিন্তু টাকার নেশায় মত্ত সে দেশের ক্রিকেট মহলে একবারও কারও মনে হল না যে, এর পর যখন দলটা সোজা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ফাইনাল খেলবে, তখন অথই জলে পড়বে।

এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গেলে কোনও দল অনেক আগে থেকে সেখানে চলে যায় সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। ভারত তো চার মাস ধরে ওখানে খেলেও মাইকেল ক্লার্কদের কাছে রীতিমতো দুরমুশ হয়ে গেল সিডনির মাঠে। তা হলে নিউজিল্যান্ড কী এমন অসাধারণ দল, যারা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে প্রথম ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেবে এবং বিশ্বকাপ জিতে বাড়ি ফিরবে? এমনটা হলে, সেটাই হত বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন। বেশ অবাক হলাম যে, নিউজিল্যান্ডের একজনও প্রাক্তন ক্রিকেটার এই প্রশ্নটা তুললেন না!

অস্ট্রেলিয়া বরাবরই বড় ম্যাচে সেরা টিম। এই নিয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ আছে কি? রবিবার মেলবোর্নে সেটা আরও এক বার প্রমাণ করে দিল ওরা। টস নিউজিল্যান্ড জেতা সত্ত্বেও কী ভাবে ওদের চেপে ধরল অজি বোলাররা! মিচেল স্টার্ক তো ফর্মে ছিলই। মিচেল জনসনকে দেখলেন? সারা টুর্নামেন্টে সাধারণ মানের বোলিং করে শেষ দুটো ম্যাচে জ্বলে উঠল! একেই বলে বড় ম্যাচের প্লেয়ার।

আর একজনের কথা না বললেই নয়। মাইকেল ক্লার্ক। কোন সময়ে দান ছেড়ে দিতে হয়, তা অজিদের চেয়ে ভাল বোধহয় কেউই জানে না। স্টিভ,পন্টিং-এর পর এ বার ক্লার্কও দেখিয়ে দিল সেটা। এর চেয়ে ভাল বিদায় আর কী হতে পারে? অনায়াসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের শুইয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে বলে দিল, ‘গুডবাই’। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বিদায়গুলোর একটা হয়ে থাকবে ক্লার্কের অবসরের এই অধ্যায়।
ব্রাভো ক্লার্ক। ব্রাভো অস্ট্রেলিয়া। আবার তোমরা দেখালে, কেন তোমরাই সেরা।