Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জেলের দিনগুলো ভয়ঙ্কর ছিল : মোহাম্মদ আমির

amerকান ছাড়িয়ে চুল নেমেছে ঘাড় পর্যন্ত, শক্ত চোয়াল। আঠেরোর ছেলেটা নাম করবেই ভেবেছিল সব্বাই। করেছিলও তো। দেশের হয়ে ১৪টা টেস্ট খেলে ৫১টা উইকেট। ১৫টা একদিনের ম্যাচ খেলে ঝুলিতে ২৫টা উইকেট। অত কম বয়সে, এমন উত্থান! নিজের মুলুকে তো বটেই, সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও শুরু হয়েছিল চর্চা।

কিন্তু, হঠাৎ করেই পিছিল পথে হড়কে গেল পা! তারপর? তলিয়ে যাওয়া কোন গভীরে! যে গভীরে সভ্যতার আলো পৌঁছয় না। যে গভীরে চেনা মানুষও অচেনা! পাঁচ–পাঁচটা বছর সেই গভীরে বন্দী থাকার পর অবশেষে একফালি আলো এসে পড়েছে। আবার অন্ধকার জীবনে রোদ উঠেছে। আর সেই রোদেলা বেলায় যাকে দেখা যাচ্ছে, তিনি মোহাম্মদ আমির। রুক্ষ-শুষ্ক পথটা পেরতে পেরতে বদলে গেছেন অনেকটাই। আঠেরোর নন, তেইশের এখন। কিন্তু, দেখলে বয়সটা যেন আরও বেশি মনে হয়! চুল ছোট ছোট করে কাটা। ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি।

chardike-ad

শরীরে মেদ জমার অবকাশ পায়নি। তাই শরীরটা যেন আরও বেশি করে চাবুক হয়েছে। ২০১০–এ লর্ডস টেস্টে ইচ্ছে করে নো বলে করে, স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছিলেন। আঠেরোর একটা ছেলের এত লোভ? এভাবে পদস্খলন ঘটল? খবরটা শোনার পর অনেকেই মানতে পারেননি। কেউ কেউ তো চেয়েছিলেন, এত ছোট ছেলেটাকে যেন জেলের গারদের ওপারে পাঠানো না হয়। কিন্তু সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন আমির। ডরসেটে তিন মাস কম বয়সী অপরাধীদের জন্য নির্ধারিত ইনস্টিটিউটে কাটাতে হয়।

সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করে দেওয়া হয় তাকে। বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, শাপমোচন ঘটেছে। আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার রাস্তা খুলেছে। আমির কেমন আছেন? তার মন কী বলছে? এতদিন চুপ ছিলেন। কোনও কথাই বলেননি। বললেও যে কেউ বুঝবেন না জানতেন। তবে এবার আর চুপ করে থাকার সময় নয়। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন আমির।

কী বললেন? ‘আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। গত পাঁচ বছরে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে যারা পাশে ছিলেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। যারা আমাকে এখনও দোষী ভাবেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার সতীর্থ, আমার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চাইছি। পাকিস্তানের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। জানি, সবার বিশ্বাস ধ্বংস করেছি। সেই বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি, এখন থেকে সততার সঙ্গে খেলব। কখনও কোনও ছলনার সঙ্গে যুক্ত হব না।’

নির্বাসন উঠে যাওয়ায় কেমন লাগছে? আমিরের জবাব, ‘খুবই উত্তেজিত। তবে মনের মধ্যে আশঙ্কার জায়গাও আছে। জানি না, লোকে আমাকে কীভাবে নেবে, কী চোখে দেখবে। তবে এটুকু বলতে পারি, পাকিস্তানের হয়ে আবার খেলতে চাই।’ জেলের ওই সময়টা কেমন ছিল? আমিরের কথায়, ‘ভয়ঙ্কর। কীভাবে ভুলব ওই অন্ধকার দিনগুলো? ভাল লাগে না আর ওই দিনগুলোর কথা ভাবতে। বারবার মনে হত, আর কোনওদিন ক্রিকেট খেলতে পারব না। আর কখনও বল হাতে নেব না! যতবার ওই ভাবনাগুলো মাথায় আসত, অস্থির হয়ে যেতাম। কঠিন সময়ে আমার স্ত্রী দারুণভাবে পাশে থেকেছে। ও বলেছিল, একদিন নির্বাসন কাটিয়ে আমি ফিরব। দেখুন, আজ ওর কথা সত্যি হল। এই ভুলটা করে আমি কতটা লজ্জিত, তা বোঝাতে পারব না। তবে এই যন্ত্রণাই আমাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করেছে।’

এতদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পর, ফেরা কি এতই সহজ? আমির জানান, ‘প্রতিদিন অনুশীলন করি। দু’ঘণ্টা করে জিমে কাটাই ফিট থাকার জন্য। মন বলছে, পারব।’ আমিরের ফেরা নিয়ে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা দ্বিধাবিভক্ত। তবে আমির পূর্ণ আস্থা রাখেন সতীর্থদের ওপর। বলেছেন, ‘ওদের কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সবাই ভাল করে কথা বলেছে। ওদের আন্তরিকতায় এতটুকুও অভাব ছিল না।’