Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক

facebook-bdবরাবরের মতো এবারও ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়েছিল সরকার। কিন্তু সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

১১ নভেম্বর প্রকাশিত ফেসবুকের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্ট’-এ এ কথা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায়, এ বছর জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে কতগুলো মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে তিনটি অনুরোধ পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তার কোনটিতে সন্তোষজনক সাড়া দেয় নি ফেসবুক। উল্লেখ্য, ফেসবুক প্রকাশিত রিপোর্টটি বিভিন্ন দেশের সরকারের সংস্কারমুলক নজরদারির জন্য প্রকাশ করা হয়, যাতে অধিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। এ রিপোর্টে এ বছরের প্রথম ছয় মাসের হিসাব নিকাশ ঠাঁই পেয়েছে।

chardike-ad

তাতে বলা হয়েছে, যেসব দেশ তাদের কাছে তথ্য চেয়েছিল তার মধ্যে কতগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে বিশ্বজুড়ে স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে এমন কতগুলো কনটেন্টকে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি লেটারস থেকেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল ফেসবুককে। এসব বিষয়ে ওই রিপোর্টে আপডেট দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে এমন কনটেন্ট ফেসবুকে ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসে বেড়েছিল শতকরা ১১২ ভাগ। একই সময়ে সরকারের তথ্য চেয়ে অনুরোধ বেড়েছিল শতকরা ১৮ ভাগ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফেসবুকের এফসিসি ডিসক্লোজারে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। ওই এক ব্যর্থতার কারণে ফেসবুক বাংলাদেশের কোনো আবেদনে সাড়া দেয় না। তবে কয়েকটি ছোটখাটো বিষয় আছে। ওই বিষয়গুলো ফেসবুকের সাথে সরকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ফেসবুক বাংলাদেশের কথা শুনতেও পারে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে অফিস না থাকা এবং কোনো ধরনের সমঝোতা চুক্তি না থাকায় বারবার ‘বিভিন্ন আইডি’র বিপরীতে তথ্য চেয়ে আবেদন করলেও ফেসবুক থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না সরকার। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ফেসবুকের কাছে ৩৪ জনের আইডির বিষয়ে তথ্য চেয়ে আবেদন করেও সরকার কোনো উত্তর পায়নি।

জানা গেছে, যেসব দেশে ফেসবুকের অফিস বা অ্যাডমিন প্যানেল নেই, সেসব দেশের সরকার কোনো ব্যক্তির তথ্য চেয়ে পাঠালেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেয় না। তবে অনুরোধের বিপরীতে যথার্থ কারণ খুঁজে পেলে সংশ্লিষ্ট আইডি ব্লক করে বা ক্ষতিকর পোস্ট সরিয়ে ফেলে ফেসবুক। আর যেসব দেশে অফিস বা অ্যাডমিন প্যানেল রয়েছে বা নিদেনপক্ষে কোন ধরনের সমঝোতা চুক্তি আছে, সেসব দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোন তথ্য চাওয়া হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে দেখে, ওই ব্যক্তি বা আইডি আন্তর্জাতিক শান্তি বিনষ্টের জন্য কাজ করছে কি না।

এছাড়া কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ বা সংঘর্ষের সাথে তার যোগসাজশ পাওয়া গেলে ওই ব্যক্তির তথ্য ফেসবুক সরকারকে সরবরাহ করে থাকে এবং সে দেশের সরকারের চাওয়া-অনুরোধকেও গুরুত্ব দেয়। সংশ্লিষ্ট আইডির আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নম্বর যদি ওই দেশের হয়ে থাকে, তাহলে ফেসবুক সেগুলো বন্ধ করতে পারে বা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহায়তা করে। কাঙিক্ষত আইপি সংশ্লিষ্ট দেশের না হলে ফেসবুক সেগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয না। এ কারণে কোনো সরকারের চাওয়ার বিপরীতে ফেসবুক শতভাগ তথ্য দেয় না।

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে বাংলাদেশ তিনবারে ৩৪টি আইডির তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানায় ফেসবুকের কাছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত একটি আবেদনে ১২ জন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি আবেদনে ১৭ জন এবং একই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি আবেদনে পাঁচজনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানায় সরকার।

প্রসঙ্গত, প্রতি ছয় মাস পরপর ফেসবুক ‘গভর্মেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়ে অনুরোধ করে, তা জানা যায়নি। তবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সবাই বিটিআরসির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। যদিও বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে না বলে দাবি করেছে।

২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ১৭ জনের আইডির তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেছিল সরকার। এর আগে ২০১৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ফেসবুকের কাছে ১২টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চায় সরকার। তবে এখন পর্যন্ত ফেসবুক কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দেয়নি। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফেসবুক। এতে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৮ দেশ থেকে ৫০ হাজার ২৩৪ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ২১ হাজার ৭৩১টি আইডির তথ্য চেয়েছে দেশটির সরকার। যুক্তরাজ্যেও এ সংখ্যা কম নয়- ২ হাজার ৮৯০।