Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আরো সহজে ভারতীয় পণ্য প্রবেশের চুক্তি

indda-product-1নতুন নৌপথ ব্যবহার করে আরো সহজে যাতে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রোববার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে করে মাত্র ১০ ঘণ্টায় ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আসতে পারবে বলে জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, বাংলাদেশের সরকার-ব্যবস্থা ইত্যাদি অনেক কিছুই তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে অগ্নি রায়ের ‘নয়া নৌপথে ১০ ঘণ্টায় পণ্য যাবে বাংলাদেশে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো।

chardike-ad

ঘুরিয়ে নাক ধরতে সময় লেগে যেত দিনের পর দিন। হাত সামান্য সোজা করতেই সেই সময় নেমে এল ঘণ্টা দশেকে!

অথচ এই ‘সোজা রাস্তা’টি খুলতে কেটে গেল ৬৮টা বছর! যার জন্য ভুগতে হল দু’দেশের সাধারণ মানুষকে, লোকসান হল কোটি কোটি টাকা। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত এবং রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণেই বঙ্গোপসাগরের সোজা পথটি অবজ্ঞা করে, এতগুলো বছর বাঁকা পথে নৌবাণিজ্য চলেছে। অনেকের অবশ্য ধারণা— রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়াও এর পিছনে বেসরকারি জাহাজ ব্যবসায়ী চক্রের স্বার্থও জড়িত ছিল।

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আজ উপকূলবর্তী নৌ-বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রোটোকল সই করেন দু’দেশের সচিবেরা। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানির পথটি সুগম হল। এ বার পণ্যবাহী নৌযান ভারতের হলদিয়া, কলকাতা, করিমগঞ্জ, হলদিয়া বা পারাদ্বীপ থেকে রওনা হয়ে বঙ্গোপাসাগর হয়ে ভিড়বে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মংলা, নারায়ণগঞ্জ বা খুলনার বন্দরে বন্দরে।

জুন মাসের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে এ ব্যাপারে দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে চুক্তি হয়। এর পর ভারত এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কর্তারা জেটগতিতে কাজ করে ছ’মাসের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। আজ জানানো হয়েছে খুব শীঘ্রই এই নতুন রুট খুলে দেওয়া হবে, যা এত দিন ছিল অচ্ছুৎ।

এত দিন কী ভাবে যেত নৌযান?

সে পথ ছিল অস্বাভাবিক রকম লম্বা। ভারতের পূর্ব উপকূলের বন্দরগুলি থেকে মালবাহী পোত বঙ্গোপসাগর হয়ে পড়ত ভারত মহাসাগরে। তার পর সিঙ্গাপুর বা কলম্বো সমুদ্রবন্দরে সেই মাল খালাস হতো। সেই মাল আবার বাংলাদেশের জাহাজে বোঝাই হয়ে পৌঁছতো সে দেশের বন্দরে। এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে পণ্য পৌঁছতে লেগে যেত দিনের পর দিন। এই বিপুল সময় নষ্টের ফলে বাণিজ্য তো মার খেতই, পরিবহণের খরচও বেড়ে যেত অনেক গুণ।

দশকের পর দশক ধরে এই ঘুরপথে বাণিজ্য চালানোর জন্য মূলত দু’দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই চিহ্নিত করছেন কূটনীতিকরা। বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের বক্তব্য, ‘‘ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে শুধু নৌবাণিজ্য নিয়েই তো জটিলতা ছিল না। সমস্যা অনেক বিষয় নিয়েই রয়েছে।

সুদীর্ঘকাল বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলেছে। সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। অস্থায়ী সরকার থেকেছে। এর পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গেরো খুলতে শুরু করেছে। যার সব শেষ উদাহরণ জলপথে বাণিজ্যকে সরল করার এই উদ্যোগ।’’ তবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্তও বাংলাদেশে হাসিনা সরকারই ছিল। তখন এই সমস্যার সমাধান কেন হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারছেন না দু’দেশের কর্তারা কেউই।

ইতিহাস বলছে— দেশ ভাগের পর পাকিস্তানের সঙ্গে নৌবাণিজ্য কেন, কোনও রকম যোগাযোগই তৈরি হয়নি। যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা ও অবিশ্বাস এতটাই বাড়ে যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাহাজ ভারতে বা ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি সে দেশের বন্দরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এই জটটি ছাড়ানোর যথেষ্ট সময় পায়নি। এর পরে খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে পরিস্থিতি সেই তিমিরেই রয়ে যায়। পরবর্তী কালে ২০০৯ সালে হাসিনা সরকার আসার পর একের পর এক জট খুলেছে।

indda-product-2প্রথমে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের ঘাঁটি উচ্ছেদ করেছে হাসিনা সরকার। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। মিটে গিয়েছে সমুদ্রসীমা নিয়ে মতান্তর। সর্বশেষ সংযোজন নৌবাণিজ্যের পথ খোলা। যদিও এখনও তিস্তা-সহ দু’দেশের মধ্যে দিয়ে যাওয়া নদীগুলির জলের ভাগ নিয়ে দু’দেশের টানাপড়েন রয়েছেই।

কেন্দ্রীয় নৌপরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দীর্ঘদিনের এই টালবাহানার পিছনে বেসরকারি জাহাজ ব্যবসায়ীদের প্রভাব এবং চাপও নিশ্চিত ভাবেই কাজ করেছে। আন্তর্জাতিক নৌচালনার অনুমতি রয়েছে এমন সব বেসরকারি জাহাজ সংস্থাগুলি এই ব্যবস্থার একচেটিয়া সুফল কুড়িয়েছে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে তারা দু’দেশের মধ্যে জলপথে পণ্য পরিবহন করিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, নতুন নৌপথ খোলায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যও নিশ্চিতভাবে বাড়বে।