Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৯০ ভাগ ছাত্রলীগ নেতার ভাত জোটে না

chatta-leageদেশের সবচেয়ে পুরনো ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগ। নানা আন্দোলন-সংগ্রামে এর যেমন রয়েছে বিপুল ভূমিকা, তেমনি আছে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের দুর্নামও। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন একচ্ছত্র আধিপত্য ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনের। অভিযোগ আছে, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। এ ছাড়া নিজেদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে তারা। প্রায়ই পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘাত-সংঘর্ষ আর চাঁদাবাজির খবর।

গত ২৬ জুলাই ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ৬৭ বছরের পুরনো এই ছাত্রসংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুর রহমান সোহাগ। তার নেতৃত্বে চলছে ছাত্রলীগের কমিটি তৈরির কাজ। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ

chardike-ad

ঢাকাটাইমস: চার মাস হতে চলল আপনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে আসছে?

সোহাগ: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে আমরা পুরোদমে কাজ করছি। বলা যায় শেষ পর্যায়ে আছে। আশা করছি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারব।

ঢাকাটাইমস: কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্য হয় বলে অভিযোগ শোনা যায় নানা সময়।

সোহাগ: এ অভিযোগ সঠিক নয়। ছাত্রলীগে এক পয়সার বাণিজ্যও হয়নি কখনো। এই যে আমি সভাপতি হয়েছি, আমার খরচ হয়েছে কেবল জেলা কমিটির নেতাদের ফোন ও খুদেবার্তার। এ ছাড়া এক পয়সাও খরচ হয়নি আমার। তাহলে কেন আমি কমিটি-বাণিজ্য করব? ছাত্রলীগে কখনো কমিটি-বাণিজ্য ছিল না, আর হবেও না।

ঢাকাটাইমস: সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছাত্রলীগ পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ আছে।

সোহাগ: না, ছাত্রলীগে কোনো সিন্ডিকেট নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের আদর্শ। আমরা সাংগঠনিক সব সিদ্ধান্ত নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে থাকি। সেখানে সিন্ডিকেট কী নিয়ে, কাকে নিয়ে হবে? সিন্ডিকেট বিষয়টা ‘টোটালি ফেক’। আসলে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার জন্যই এমনটি প্রচার করা হয়।

হ্যাঁ, এটা ঠিক, নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের একটা বিষয় থাকতে পারে। যেমন, আপনি যে বিভাগে পড়াশোনা করেন, সেখানকার সবার সঙ্গে নিশ্চয় আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই। কিছু বন্ধু থাকে, যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা বেশি ঘনিষ্ঠ। এটাকে কিন্তু আপনি সিন্ডিকেট বলবেন না। তেমনি ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা আমাদের সহযোগিতা করেন না। আবার অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এটাকে হয়তো অনেকে বলে তাদের সঙ্গে আমাদের সিন্ডিকেট। কিন্তু আমি মনে করি, এই সহযোগিতা যেকোনো সংগঠনের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।

ঢাকাটাইমস: কেউ ছাত্ররাজনীতিতে এসে কিছুদিনের মধ্যে কোটিপতি বনে যান বলে আলোচনা প্রচলিত আছে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

সোহাগ: ছাত্রলীগে এমন নজির খুব কম। বরং ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন এমন ৯০ শতাংশ নেতাকর্মী তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পায় না। আমি তো গত কমিটির পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। বলতে পারি, ওই কমিটির ৯৯ শতাংশ সদস্যের কপালে তিন বেলা ভাত জোটেনি। গত কমিটির নেতারা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছে।

ঢাকাটাইমস: ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সময় সমালোচনা হয়। বলা হয়ে থাকে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

সোহাগ: ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এমন অভিযোগ আসলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র আগেও ছিল। নিজেদের কাটতি বাড়াতেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে গণমাধ্যমে। আমাদের সঙ্গে কথা না বলে ঢালাওভাবে লেখা হয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে, ছাত্রলীগের অমুক নেতা ছিনতাই করেছে। সর্বশেষ শাহবাগের ঘটনায় বলা হচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের এএসপি ও আতিক কবে ছাত্রলীগ করেছিল সেটা আপনারা বের করে দেখুন। আবার কখনো লেখা হয় ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতা’। তার মানে ‘ছাত্রলীগ’ শব্দটি না লিখলে যেন খবরেই হয় না।

এটা ঠিক যে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অনেকে অপরাধ করে থাকে। তবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

আমি মনে করি, দেশের সব জায়গায় ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি আমরা। কিছু কিছু জায়গায়, যেমন চবি, শাবিসহ বিভিন্ন শাখার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

ঢাকাটাইমস: রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোকে এখন আর ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করতে দেখা যায় না। আপনারা ছাত্রলীগ ছাত্রদের জন্য কী করছেন?

সোহাগ: আমাদের প্রতিদিনের সব কর্মকাণ্ড ছাত্রদের কল্যাণকে ঘিরে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোন ইস্যু, কোন প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কোন ইস্যুতে সেটাও দেখুন। জন্ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। তারপর যত আন্দোলন হয়েছে দেশে, তাতে ছাত্রলীগের বিপুল অবদান রয়েছে।

এখন আমরা নতুন প্রজন্ম আন্দোলন করছি ছাত্রদের দাবি নিয়ে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি নিয়ে ১৯ দফা দিয়েছি। তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। ক্যাম্পাসকে আমরা ব্যানার-পোস্টারমুক্ত করেছি। আমরা ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে আমরা বিভিন্ন ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব। এ ছাড়া ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের অতিরিক্ত আবাসিক ফি নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। যেহেতু ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নেই, তাই ছাত্রদের দাবি আদায়ে আমরা কাজ করছি।

ঢাকাটাইমস: ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

সোহাগ: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। আমরা ছাত্র সংসদের নির্বাচন চাই। আর কেন চায় সেটারও ব্যাখ্যা আছে। তার প্রথম কারণ হলো এখন যদি ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় আমাদের ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতারা তাও পারবে না; কারণ তাদের ছাত্রত্ব নেই। বয়সের কারণে ছাত্রসংসদের নির্বাচনের অযোগ্য হবে। তাই তারা চায় কি না সেটাও দেখতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ছাত্র সংসদ নেই বলে ছাত্রনেতারা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তাই ছাত্রদের দাবি আদায়ে আমরা কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারছি। তবে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আমরা তো সব দাবি আদায় করতে পারব না।

ঢাকাটাইমস: ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নেই। এমনটা কেন হচ্ছে?

সোহাগ: ক্যাম্পাসে কেউ যদি সহাবস্থানে আসতে চায় কিংবা মধুর ক্যান্টিনে আসতে চায়, তাদের অবশ্যই ছাত্র হতে হবে। তা না হলে কীভাবে আসবেন? তারা যদি প্রকৃতই ছাত্র হয় তাদের সঙ্গে সহাবস্থান হবে। কিন্তু তাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে আরো ১৫ বছর আগে। এখন তাদের নিজের পরিবার, ছেলেমেয়ে আছে। তারা তো এখন পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসার কথা।

ছাত্রলীগ ও কিছু বাম ছাত্রসংগঠন ছাড়া অন্য সংগঠনগুলোর রাজনীতি ছাত্রদের হাতে নেই। ছাত্রত্ব না থাকলে তো ছাত্ররাজনীতি হতে পারে না। ছাত্রদলে কেউ কি ছাত্র আছে? তাহলে সহাবস্থান কীভাবে হবে।

আর ছাত্রশিবির একটি জঙ্গি সংগঠন। তাদের সব কর্মকাণ্ড জঙ্গি ঘরানার। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশ থেকে বিতাড়নের দাবি জানাই।

ঢাকাটাইমস: ছাত্রলীগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি?

সোহাগ: ছাত্রলীগকে অনেকেই বলে দক্ষিণ এশিয়ার বড় ছাত্রসংগঠন। আমি বলব, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন হলো ছাত্রলীগ। পৃথিবীর কোনো দেশের ছাত্রসংগঠনে এত কর্মী নেই। দেশের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একমাত্র আমরাই গঠনতন্ত্র মেনে চলি। আমাদের সবার ছাত্রত্ব আছে। আমরা নেতৃত্বে এসেছি ভোটের মাধ্যমে। প্রকাশ্য ও স্বচ্ছ ব্যালেট পেপারে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি আমরা। এমনটি আর কোনো ছাত্রসংগঠনে নেই।

আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা মতো কাজ করছি। বর্তমান ছাত্রলীগ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সুশৃঙ্খল। সামনে আরো বেশি সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করব আমরা।

আমরা মনে করি, দেশের অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রলীগের রাজনীতি অনুসরণ করতে পারে।

ঢাকাটাইমস: ছাত্রলীগ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সোহাগ: জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২১ বাস্তবায়নে কাজ করা এবং একটি সুশৃঙ্খল ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করা।

ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

সোহাগ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সৌজন্যেঃ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম