Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

২৩৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ চলছে

electionবজরজুড়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে একপশলা ঠান্ডা হাওয়া এল পৌরসভা নির্বাচনে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা, গণমাধ্যমের প্রচার, মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আর একযোগে দুই শতাধিক পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে বলে এই নির্বাচন পেয়েছে জাতীয় নির্বাচনের আবহ। আর তাতে রাজনৈতিক পর‌্যবেক্ষকরা দেখছেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের গুমোট আবহাওয়া কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত।

বুধবার ভোরের আলো ফোটার পর একযোগে শুরু হয়েছে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট নেয়া। এর মধ্য দিয়ে প্রধান দুই দলের নৌকা ও ধানের শীষের ভোটের লড়াইয়ের সাত বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটবে। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটও প্রত্যক্ষ করবে দেশবাসী। ফলে এই ভোট ঘিরে উৎসবের আমেজ কর্মী-সমর্থকসহ ভোটারদের মধ্যে।

chardike-ad

তবে এই উৎসব-উচ্ছ্বাসের মধ্যে শঙ্কাও আছে ভোটারদের মধ্যে। কেননা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের প্রধান দুই দল নিজেদের দলীয় প্রতীক নিয়ে এই প্রথম মুখোমুখি। দুই দলই তাদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করে জনপ্রিয়তা প্রমাণে মরিয়া। এ অবস্থায় ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে উৎকণ্ঠিত ভোটাররা। তবে সুষ্ঠু ভোট ও নিরাপত্তা নিয়ে এই উৎকণ্ঠার মধ্যেই এখন অপেক্ষা ভোটের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ২০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্দলীয় কাউন্সিলর পদেও দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থীরাই লড়ছেন বেশির ভাগ।

নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থী ১২ হাজার ১৭১ জন। মেয়র পদে ৯৪৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৭৪৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৪৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৪টি মেয়র, ৭৩১টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ২ হাজার ১৯৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৭ জন মেয়র, ৯৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকায় সরকারি দলের বাধার মুখে অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এ কারণে একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ভোটের আগেই যে সাতটি পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, সেগুলো হলো পিরোজপুর, মাদারগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়া, ফেনী, পরশুরাম, চাটখিল ও ছেংগারচর।

এর আগে ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই মূলত শুরু হয়ে যায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারণা যুদ্ধ। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রতাহারের শেষ দিন থেকে এই প্রচারণা ক্রমে তুঙ্গস্পর্শী হয়। তাতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শামিল রোজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়ান। প্রচারণার ঢামাঢোলে অর্ধশতাধিক পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ছোট-বড় সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

প্রার্থীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক। মন্ত্রী-এমপির বিরদ্ধেও অভিযোগ ওঠে আচরণবিধি ভাঙার। এ রকম সংঘর্ষ এবং বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ভোটের আগেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর এ কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। তবে নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছে ভোট হবে শান্তিপূর্ণভাবে। এ জন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, নিরাপত্তাঝুঁকি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্যকে ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ দুই ভাগে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১ হাজার ১৮৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তবে উভয় ধরনের কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।

সোমবার সকাল থেকেই টহল শুরু করেছেন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা। এ ছাড়া ১ হাজার ২০৪ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। তারা আইন ও বিধি লঙ্ঘনকারীদের সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে সাজা দিতে পারবেন। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

২৩৪ পৌরসভায় ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোট নেয়া হচ্ছে। মোট ভোটারসংখ্যা ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ ও মহিলা ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৩ হাজার ৫৫৫ জন ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ২১ হাজার ৭১ জন, পোলিং কর্মকর্তা ৪২ হাজার ১৪২ জন।