Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৯ বছরের কনের ৬৯ বছর বয়সী বর!

keniaস্কুল অ্যাসেমব্লিতে যেভাবে শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশনে করে, তেমনি সেও নেচে যাচ্ছে। কেনিয়ার অন্যান্য কিশোর কিশোরীদের মতো ইউনিসের কাছেও এই পুরো বিশ্ব যেন খুব গতানুগতিক। ধূসর পোশাক পরিহিত ইউনিস একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কোথায় যেন তাকিয়ে আছে। মাত্র তেরো বছরের এই জীবনের শুরুতেই যে ধাক্কার ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে তাতে তার কাছে গোটা পৃথিবীই ধূসর হয়ে যাওয়ার কথা। মাত্র নয় বছর বয়সে ইউনিসের পিতা-মাতা তার দাদার বয়সী এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার বিয়ে দেন স্থানীয় সামবুরু ঐতিহ্য অনুসারে।

সামবুরুরা হলো কেনিয়ার বহু প্রাচীন গোত্রগুলোর মধ্যে একটি, যারা মূলত পশুর উপর ভিত্তি করে জীবন নির্বাহ করে। তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মাসাইদের অনেক মিল আছে। অনেকের মতে, মাসাইদের থেকে বের হয়ে যাওয়া একটি দলই পরবর্তীতে সামবুরু নাম ধারণ করে আরও পশ্চিমে সরে আসে। এই গোত্রের ইউনিস এবং অন্যান্য মেয়েরা আগের তুলনায় অনেক সামাজিক সংস্কার থেকে বের হতে পারলেও বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন ব্যাপার থেকে এখনও দূরে থাকতে পারেনি। কারণ এই রীতিগুলোর সঙ্গে শুধু পরিবার নয়, সামাজিক বিভিন্ন সংস্কারও জড়িত, যে কারণে চাইলেই এসব সংস্কারকে দূর করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না।

chardike-ad

‘যখন আমার নয় বছর বয়স, তখন একদিন আমার বাবা ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর আমি তার সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমি একজন স্ত্রী হবো কিন্তু আমি খুবই নিরীহ ছিলাম। আমি স্কুলে যেতে চাইতাম, কিন্তু ওই মানুষটি আমাকে তার তৃতীয় স্ত্রী বানাতে চাইছিল। আমি তাকে বলে দিলাম যে, আমি আপনার স্ত্রী হবো না এবং এই কথায় তিনি আমাকে বেত্রাঘাত করলেন।’ এভাবেই ইউনিস তার নয় বছর বয়সের অভিজ্ঞতা বলছিলেন ১৩ বছর বয়সে এসে। কিন্তু সামবুরুর আর দশজন মেয়ের মতো নয় ইউনিস। কিভাবে নিজেকে একটু একটু করে সরিয়ে আনলেন ওই সংস্কার থেকে তার মুখ থেকেই শোনা যাক।

‘একদিন আমি জানতে পারলাম যে একজন নারী আছেন যিনি শিশুদের সাহায্য করেন। আমি খালি পায়ে হেটে বারাগোই থেকে তার কাছে গেলাম। আমার হাটার জন্য কোনো জুতোও ছিল না। কিন্তু ওই খালি পায়ে হেটেই আমি মালালালে পৌছাই। কুলেয়া আমাকে শিশুদের অফিসে নিয়ে যায় এবং তিনি আমাকে রক্ষো করেন।’ ইউনিস যে অফিসটিতে এসেছিলেন সেটার নাম সামবুরু গার্লস ফাউন্ডেশন। জোসেফাইন কুলেয়া নামের এক সাহসী নারী এই অফিসটি চালান এবং কেনিয়ার এরকম আরও দুইশ শিশুর কাছে তিনি ‘মামা কুলেয়া’ নামে পরিচিত। শিশুদের মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের দায়িত্ব নিতে রাজি হন না, তখন মা হিসেবে আর্বিভূত হন কুলেয়া।

কুলেয়া দীর্ঘদিন ধরেই সামবুরুর ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তার ভাষ্য মতে, ‘আমি একটা সময় বুঝতে পারলাম যে একমাত্র আমরাই এফজিএম(নারীদের যৌনাঙ্গে অঙ্গহানি) করি, অন্য সম্প্রদায় এখন আর তা করে না। আমি এটাও বুঝতে পারি যে কোনটা ঠিক এবং পার্থক্যটা আমাকে বুঝতে হয়। এভাবেই আমি মেয়েদের উদ্ধার করতে শুরু করি। আমার দুই বোনকে উদ্ধারের মাধ্যমে আমার যাত্রা শুরু হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিল দশ বছরের এবং তাকে বিয়ে করানো হচ্ছিল। মূলত বিয়ের সময়ই মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদ করা হয়। তার বিয়ের কথা শুনেই আমি তাকে উদ্ধার করি এবং স্কুলে ভর্তি করে দেই।’

বহু বছরের এই প্রথার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কুলেয়াকে। নিজ সম্প্রদায়ের হুমকিতো আছেই পাশাপাশি অন্যান্য গোত্রগুলো থেকেও অবিরত তাকে হুমকি দেয়া হয় এবং তার সংগঠন তুলে দেয়ার জন্যও বলা হয়। কিন্তু সবকিছু সহ্য করে তবুও নিজের নারীত্বের টানে এখনও একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনটি। একটি রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুলেয়া তার প্রচার কার্যক্রম চালান। অধিকাংশ গোত্রেই মেয়ে শিশুদের স্রেফ যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয় হয়। এমনও হয়েছে যে, একটি মাত্র নেকলেসের বিনিময়ে অবলীলায় পিতা-মাতা একই পুরুষের কাছে তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে এত নিরাশার মাঝেও কুলেয়ারা কেনিয়ার এই সংস্কারে আটকা মেয়ে শিশুদের জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাড়িয়ে আছে।(বাংলামেইল)