Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

২৭ বছর পর ধরা খেলেন হাইকোর্টের ভুয়া আইনজীবী

fake-lawerসুপ্রিমকোর্টের ভুয়া আইনজীবী এসএম শহিদ উল্ল্যাহকে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে শাহবাগ থানার পুলিশ তাকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রিমকোর্ট বারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাশ।

অন্য আইনজীবীর সনদের আইডি ব্যবহার করে গত ২৭ বছর হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন এই শহিদ উল্ল্যাহ। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।

chardike-ad

নিজের সনদ না থাকলেও আইনজীবী মো. শহিদ উল্ল্যাহর পরিচয়পত্র নম্বর (আইডি) ব্যবহার করে তিনি হাইকোর্টে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মামলা পরিচালনা করেছেন বলে সুপ্রিমকোর্ট বার জানিয়েছে।

এ ভুয়া আইনজীবী হলেন এসএম শহিদ উল্ল্যাহ। মূল আইনজীবী মো. শহিদ উল্ল্যাহর লিখিত আবেদনের পর তদন্ত করে এসব তথ্য পায় সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। এ ঘটনায় এসএম শহিদ উল্ল্যাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট বার। এমনকি তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য নোটিশও দিয়েছিলো সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার দুপুরে এ আইনজীবী পরিচয়দানকারী এসএম শহিদ উল্ল্যাহ সুপ্রিমকোর্ট আসেন। তখন খবর পেয়ে শাহবাগ থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এসএম শহিদ উল্ল্যাহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শহিদ উল্ল্যাহর আইডি কার্ড ব্যবহার করে দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ মামলা পরিচালনা করে আসছেন। সম্প্রতি এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে তদন্তের পর প্রমাণিত হয় যে তিনি সুপ্রিমকোর্টের সনদ না পাওয়ার পরেও দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করে আসছেন।’

এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট বারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমরা বারের পক্ষ থেকে এ লোকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করেছি।’ তিনি জানান, ‘আমরা সেই আইনজীবীর প্রায় হাজারখানেক মামলার নথিপত্র ও কপি উদ্ধার করেছি।’

এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত ২২ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, এসএম শহিদ উল্ল্যাহ আদৌ কোনো আইনজীবী নন, অথচ তিনি আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বিগত ২৭ বছর ধরে সুপ্রিমকোর্ট বারে অবস্থান করে প্রতারণামূলকভাবে আইন পেশা পরিচালনা করে আসছেন।

নোটিশে আরো বলা হয়েছিল, তিনি তার সনদ অত্র অফিসে উপস্থাপন করবে মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করলেও কোনো সনদ উপস্থাপন করতে পারেননি। তাকে সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ তার সন্ধান পান, তবে তাকে ওই কার্যালয়ে সোপর্দ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে আইনগত বিষয়সহ যেকোনো লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে ওই নোটিশে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন পারভীন আক্তার নামের এক নারী সদস্য। পারভীন আক্তার নিজের প্রার্থী ফরমে সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য এসএম শহিদ উল্ল্যাহর কাছে যান। কিন্তু শহিদ উল্ল্যাহ পারভীনের সেই ফরমে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করেন, এক পর্যায়ে অনুরোধের পর পারভীনের ফরমে স্বাক্ষর করেন তিনি। কিন্তু স্বাক্ষর দেয়ার সময় সমর্থকের আইনজীবী হিসেবে তার আইডি নম্বর উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন এ ভুয়া আইনজীবী। পরে তিনি স্বাক্ষরসহ আইডি উল্লেখ করেন। তবে এসএম শহিদ উল্ল্যার দেয়া সেই আইডি নম্বর সঠিক নয় প্রমাণ হওয়ায় পারভীনের ফরম বাতিল হয়ে যায়। পরে পারভীন মূল আইডি নম্বরধারী মো. শহিদ উল্ল্যাহকে খুঁজে বের করেন। মূল আইডির নম্বরধারী মো. শহিদ উল্ল্যাহ আওয়ামী সমর্থিত একজন আইনজীবী। তিনি এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট বারের কাছে লিখিত আবেদন করেন।

এ পর্যায়ে ভুয়া আইনজীবী এসএম শহিদ উল্ল্যাহকে সনদ জমা দেয়ার জন্য নোটিশ দেয় সুপ্রিমকোর্ট বার। কিন্তু তিনি নোটিশ পাওয়ার পরও বার অ্যাসোসিয়েশনে কোনো ধরনের সনদ জমা দিতে পারেননি। বরং নোটিশের জবাবে ভুয়া আইনজীবী এসএম শহিদ উল্ল্যাহ লিখিতভাবে নিজের দোষ স্বীকার করেন সুপ্রিমকোর্ট বারের কাছে।

তিনি বলেন, ‘আমি এই মর্মে স্বীকার করছি যে, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক খুলনা জেলা বারে প্র্যাকটিস করার অনুমতি পেয়ে বার কাউন্সিল থেকে সনদ লাভ করি এবং আইনপেশা শুরু করি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সাল থেকে হাইকোর্টে কাজ করছি। আমার সদস্যপদ না থাকায় মামলা পরিচালনার সময় অন্যের আইডি ব্যবহার করি। যার নম্বর (মো. শহিদ উল্ল্যাহ) ২১৯৭।’

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অফিস সূত্রে জানা যায়, ভুয়া আইডি ব্যবহারকারী এসএম শহিদ উল্ল্যাহ গত ২৯ বছরে প্রায় ১০ হাজার মামলা পরিচালনা করেছেন। এ সময়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। ইতোমধ্যে এই আইনজীবী রাজধানীর রামপুরা ও মোহাম্মদপুরে দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি ঢাকাতে প্রায় ৪১ কাঠা জায়গার মালিক বলেও জানা গেছে। এছাড়া তার চারটি প্রাইভেট গাড়ি আছে।

জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী পারভীন আক্তার বলেন, ‘এসএম শহিদ উল্ল্যাহ আদালতে সব সময় সিনিয়র আইনজীবীর পরিচয় দিয়ে মামলা পরিচালনা করতেন। এ জন্য অন্যান্য আইনজীবীরা তাকে মামলা করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিস না করেই রাজধানীতে দুটি বাড়ি ও চারটি গাড়ির মালিক হয়েছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বার কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী এই ভুয়া আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা ও সাজা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি আইনজীবী সনদ ছাড়া পোগনে আদালতে প্র্যাকটিস করেন সে ক্ষেত্রে আদালত নয়, বার কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ভুয়া আইনজীবীর মাধ্যমে পরিচালিত মামলাগুলোর শেষ পর্যন্ত কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি মামলায় আদেশ বা রায় দেন আদালত, আইনজীবী নয়। এজন্য এ মামলাগুলোর ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না।’

জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘সনদ ছাড়া কেউ আইনজীবী সেজে মামলা পরিচালনা করলে মামলার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ মামলার রায় আইনজীবী দেন না, দেন আদালত।’(বাংলামেইল)