Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পুলিশি নির্যাতনের বিভীষিকাময় বর্ণনা দিলেন রাব্বানী

robbaniতল্লাশির নামে মোহাম্মদপুর থানার এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। এমন নির্যাতনের বিচার চেয়ে অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। তদন্ত শেষে ব্যবস্থার নেওয়ার কথা জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা।

বাসা ভাড়া দিতে শনিবার রাত ১১টার দিকে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক ছাত্র গোলাম রাব্বানী ওরফে রাব্বী।

chardike-ad

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সে সময় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে তার গতিরোধ করে পুলিশ। আমার কাছে মাদকদ্রব্য আছে দাবি করে তল্লাশির নামে গাড়িতে উঠায়। তারপরই শুরু করে নির্যাতন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী আরো বলেন, “ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে বাসার দিকে যাবার সময় একজন পেছন থেকে এসে আমার শার্টের কলার আর হাত ধরে পুলিশ ভ্যানের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। আর বলছিলো, স্যারের সাথে কথা আছে, ডাকে। তখনই আমার পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাবি ছাত্র কাদেরের কথা মনে যাচ্ছিলো। হয়তো আমিও এরকমই একটা ফাঁদে পড়ে যাচ্ছি।”

“এরপরের ঘটনা আরও দুর্বিষহ, আমাকে লাঠি-রাইফেলের মাথা দিয়ে গুতাচ্ছে, এক এক করে পোশাক খুলছে, আর আজেবাজে বকছে। ভাব নিচ্ছে, খুঁজছে, কোথায় আছে, ইয়াবা, নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অস্ত্র-সরঞ্জাম জাতীয় কিছু…।”

সেসময় পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমাকে প্রচণ্ড পরিমাণে টর্চার করা হয়। এখনও মুখ খুলতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি কথা বলতে পারছি না।” এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাব্বানী।

ওই সময় রাস্তায় এ রকম আরও কয়েকজনকে ধরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গোলাম রাব্বানী বলেন, “আরও কয়েকজনকে উঠিয়ে তারা মারে। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে একটু বেশি রাত করে একা কেউ রিকশায় যাচ্ছিলো। তাকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে বলে তুই হিরোইন খাইয়া এইমাত্র যাচ্ছোস। ৫০ হাজার টাকা দে।”

তার বন্ধু জাহিদ হাসান বলেন, “রাব্বানী গাড়ির মধ্যে থেকে আমাকে একটা মেসেজ পাঠায়। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে তো তাকে গাড়ি থেকে নামায়নি। ও গাড়ির মধ্যে থেকে আমাকে একটা মেসেজ দিসে যে ভাই কাদের কেস। মানে ওই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আব্দুল কাদের ছিলো। কাদের কেস বলতেই আমরা বুঝতে পারসি। তখনতো ওকে কথা বলতেও দিচ্ছিলো না।”

রাতে রাব্বানীর বন্ধুরা গিয়ে গাড়ি থেকেই ছাড়িয়ে আনেন তাকে।

তবে আটকের কথা শিকার করলেও রাব্বানীকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন এএসআই মাসুদ।

মোহাম্মদপুর থানার এএসআই মাসুদ শিকদার বলেন, “আমরা তাকে দ্রুত ধইরা গাড়িতে উঠাইয়া তাজমহল রোডের মাথায় আসছি। এখন গাড়ির পিছনে ওনাকে কে কি বলছে এইটা আসলে আমি অবগত নই। আমিতো সামনে। তাকে চার্জ করার টাইমটাতেই তার সাথে আমার মুখোমুখি কথা হয়। টাকা নিয়া তো আমার কোনো কথাই হয় নাই।”

মোহাম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগ ডায়েরি করেছেন গোলামী রাব্বানী। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও কবে তদন্ত শেষ হবে জানায়নি মোহাম্মদপুর থানা।

এই ঘটনার পর গোলাম রাব্বানী তার ফেসবুকে লিখেছেন, “সময় যত গড়াচ্ছে, নিজের মধ্যে বারবারই ডুকরে উঠছে, কাদের কিংবা লেমনের গল্প…। লোম শিহরে উঠছে.. লাথি-গুতা মারছে, আর বকছেতো-বকছেই। তাদের ভাব এমনই যে, দেশে কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা..? বা রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ..?? তারা-ই সব..!!”

“এমনকি আমার বক্তব্য মারফত পরিচয় পাওয়া, বিসিএস ক্যাডার, পুলিশেরই এসপি পরিচয় দেয়া ভাই থেকে শুরু করে গুরুজন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতিও বাদ যায়নি, তাদের অসম্মান আর গালাগালের হাত থেকে…!!!

আমার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকুরির পরিচয়পত্র, পূর্বের সাংবাদিকতা-সংবাদ উপস্থাপনা করার পরিচয় থেকে শুরু করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত পরিচয়ও দমাতে পারেনি, তাদের নোংরামি-ভন্ডামি…!!”

তিনি আরো লেখেন, “ঘণ্টা কয়েক সময়ে যা দেখলাম, আর শিকার হলাম, তার স্থায়ীত্ব হয়তো আমার ইতিবাচক চিন্তা-চেতনাকেও চিরতরে বিকলাঙ্গ করে দিতে সক্ষম..!! কেননা- ঐ পুলিশ ভ্যান নানা দিক যাচ্ছে, আর কাউকে রিকশা থেকে নামিয়ে, আবার কাউকে রাস্তা থেকে ধরে, যা করলো…!!!; টাকা নেয়াসহ, ভয়-ভীতি আর যেভাবে ব্যবহার করলো, তার তিক্ত অভিজ্ঞতা আজীবনও হয়তো বলতে বা বুঝাতে পারবো না..।”