টানা পাঁচ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর সিরিয়ায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। রুশ-মার্কিন পরিকল্পনায় ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টায় (স্থানীয় সময় রাত ১০টায়) এ যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর আগে যুদ্ধরত প্রায় একশ’ দল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

সিরিয়ার আলেপ্পোতে স্বাভাবিক জনজীবন। ছবিটি গতকাল শুক্রবার রাতে তোলা। আজ শনিবার সকাল থেকে দেশটিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। ছবি: এএফপি
খবরে প্রকাশ, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এবং সশস্ত্র অন্য আসাদবিরোধী দলগুলো ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে শুরু হতে চলা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নুসরা ফ্রন্ট এ বিরতির আওতায় নেই বলে জানা গেছে। শুক্রবার নুসরা ফ্রন্ট তার সমর্থকদের সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে জোর হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি শুরুর কয়েক মিনিট পর দামাস্কাসে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আইটিভি।
এএফপির খবরে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর আলেপ্পোতে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগের দিনই সেখানে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। দেশটির মানবাধিকার-বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, উত্তরের লাত্তাকিয়া প্রদেশ এখন শান্ত। হোমস ও হামা প্রদেশও শান্ত রয়েছে।
জাতিসংঘের দূত স্তাফান দ্য মিসতুরা বলেন, যুদ্ধবিরতি বজায় থাকলে ও ঐকমত্যে পৌঁছানোর অন্যতম শর্ত ত্রাণ বাড়ানো হলে আগামী ৭ মার্চ থেকে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
তবে যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, জঙ্গিদল আইএস ও আল নুসরার ওপর হামলা চলতে থাকলে সিরিয়ার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া কঠিন। তাদের একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আল-কায়েদা সমর্থিত আল-নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। নুসরার যোদ্ধারা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। মার্কিন দূত সামান্থা পাওয়ার বলেন, যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সহিংসতা কমার আশা রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী দীর্ঘ পাঁচ বছরের সিরীয় গৃহযুদ্ধে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছেন।