প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিরোশিমা সফরে যাচ্ছেন বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী মাসে গ্রুপ অব সেভেন শীর্ষ সম্মেলন শেষে তিনি সেখানে যাবেন। জাপানের নিক্কেই বিজনেস ডেইলি গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমায় আণবিক বোমা হামলা চালায়। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালের ওই হামলায় জাপানের শহরটি মুহূর্তে নরকে পরিণত হয়েছিল। তত্ক্ষণাত্ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। তেজস্ক্রিয়তার কারণে মৃত্যুর শিকার হয় আরো বহু মানুষ। পঙ্গু হয় অসংখ্য।
ভয়াবহ ওই হামলার স্মৃতি সারা বিশ্বে আণবিক মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুললেও এ পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাপানের শহরটিতে যাননি। প্রথমবারের মতো বারাক ওবামা সেখানে যাচ্ছেন বলে জাপানি দৈনিকের খবরে প্রকাশ। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার সঙ্গে থাকবেন।
এর আগে চলতি মাসের গোড়ার দিকে প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরি হিরোশিমা গিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার এটমিক বম্ব ডোম ও পিস মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। মার্কিন হামলার পরের মুহূর্তের ছবিগুলো দেখে নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসে বলে মন্তব্য করেছিলেন জন কেরি।
নিক্কেই জানিয়েছে, হিরোশিমা সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। সফরটি যাতে ‘অনুতাপমূলক’ মনে না হয়, সেজন্য ওবামা বিশেষ যত্ন নিতে পারেন বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। কারণ চলমান নির্বাচনী মৌসুমে হিরোশিমায় ওবামার সফর যুক্তরাষ্ট্রে নানাভাবে আলোচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়াইরতরা তার সফর কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
হিরোশিমা সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেখানে বক্তৃতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের টেম্পল ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের ডিরেক্টর জেফ কিংস্টন বলেন, ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাপানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং ঐতিহাসিক বিষয়াদিতে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক জোর বৃদ্ধির জন্য হিরোশিমায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশের এখনই সময়। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার পক্ষে বক্তব্য রেখে ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল জিতেছিলেন বারাক ওবামা।
চলতি মাসের ১০-১১ তারিখে জি৭ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা হিরোশিমায় বৈঠক করেছিলেন। সে সময় তারা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে ‘হিরোশিমা ঘোষণা’ দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানানো হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আলোচনা স্তিমিত হয়ে এসেছে। হিরোশিমার বৈঠকটিকে জি৭ এজেন্ডায় নিরস্ত্রীকরণকে শীর্ষে আনার সুযোগ হিসেবে নিয়েছে জাপান।
মার্কিন বিমান বাহিনীর বি৫২ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা হিরোশিমায় যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছিল, তা এখনো শহরটিকে ভোগাচ্ছে। তিনদিন পর নাগাসাকি শহরে আরেকটি আণবিক বোমা হামলায় আনুমানিক ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর ছয়দিন পর জাপানের সম্রাট হিরোহিতো রেডিওতে দেয়া এক বক্তৃতায় ‘নতুন ও সবচেয়ে নিষ্ঠুর বোমার বিপর্যয়কর’ আঘাতের কথা উল্লেখ করে তার দেশের শর্তহীন আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
হিরোশিমার ভয়াবহ ক্ষতের কারণে জাপানে পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী জনমত প্রবল। যুদ্ধের বিরুদ্ধেও জাপানিদের সমর্থন জোরালো। গত বছর রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাসের উদ্যোগ নিলে জাপানিরা বিক্ষোভে নেমেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার সদস্য হিসেবে ১৯৬৭ সালে পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী তিনটি নীতি গ্রহণ করে। এতে বলা হয়, জাপান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ধারণ, উত্পাদন অথবা নিজ ভূখণ্ডে উপস্থাপনের অনুমোদন করে না।