Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ: হাইকোর্ট

1462438090সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে গতকাল এ রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে আদালত বলেন, ‘সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা মাত্র। যদিও বিশ্বের কয়েকটি দেশে এমন বিধান রয়েছে।’

chardike-ad

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাদের কোনো বাধা নেই। যদিও ভারতে কিছুটা বাধা রয়েছে। তবে তারা উন্নতির পথে রয়েছে। বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা স্বাধীন নন। বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারবেন না ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রের মূল তিনটি স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদের স্বতন্ত্রতা ক্ষুণ্ন করবে। গণতন্ত্রের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিচারপতি নিয়োগের নীতিমালা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। আদালত বলেন, বিচারপতি অপসারণে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই উত্তম পন্থা।

গতকাল বেলা ২টা ২০ থেকে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত ৬৩ শতাংশ রাষ্ট্রে অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ষোড়শ সংশোধনীতে তা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ সংশোধনীর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল অসদাচরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

হাইকোর্টের রায় সংবিধান পরিপন্থী: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় ‘সংবিধান পরিপন্থী’। সংসদের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে দেয়া এ রায় আপিল বিভাগে টিকবে না। রাষ্ট্রপক্ষ এখন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আইনি পথেই যাব। আমরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না। সেজন্য আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আপিল করব।

সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী দিনে গতকাল বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ৩০০ বিধিতে আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করলে তিনি এসব কথা বলেন।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও। গতকাল বিকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হাইকোর্টের দেয়া এ আদেশে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ। এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আদালতের কাছে সার্টিফিকেট (সরাসরি আপিল করার অনুমতি) প্রার্থনা করেছি। আপিল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এটা সরাসরি আপিল বিভাগে আপিল হিসেবে গণ্য হবে। সেভাবেই শুনানি হবে। কিন্তু আমরা এ রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত রাখার জন্য আগামী রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার জজের কাছে আবেদন করব।

বিরোধী দলের ওয়াকআউট: এদিকে রায়ের পর এর প্রতিবাদে গতকাল সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি-সংক্রান্ত বিলটি সংসদে উত্থাপনের সময় সংসদ থেকে বের হয়ে যান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পরে অবশ্য সংসদে যোগ দেন তারা।