মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা দেশীয় অর্থনীতির সুরক্ষায় চীন যদি কখনো সংরক্ষণশীল নীতির আশ্রয় নেয় তবে কী হবে? এমন হলে সবার আগে ধাক্কা পড়বে প্রতিবেশী দেশ সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং-বিষয়ক ফরাসি ব্যাংক ন্যাটিক্সিসের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটির হংকংভিত্তিক অর্থনীতিবিদ অ্যালেসিয়া গার্সিয়া ও ট্রিন এনগুয়েন পারস্পরিক বাণিজ্য, পর্যটন এবং বিনিয়োগ সূত্রগুলো বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
অবশ্য এদিক থেকে অপেক্ষাকৃত শক্ত অবস্থানে আছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে টিকে থাকার ক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত বাণিজ্য চুক্তির গুরুত্বকেই বড় করে দেখিয়েছেন দুই অর্থনীতিবিদ।
এশিয়ার পর্যটননির্ভর অপেক্ষাকৃত ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর চীনের প্রতি নির্ভরশীলতার পরিমাণও অনেক বেশি। কেবল ২০১৫ সালেই চীনের বিদেশগামী পর্যটকের সংখ্যা ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৫৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে দেশটির বিদেশগামী পর্যটন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ন্যাটিক্সিসের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার পেছনে চীনাদের খরচের পরিমাণ ২৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব চীনা পর্যটকের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই অবকাশ যাপনের জন্য প্রথম পছন্দ এশিয়া।
চীনা পর্যটকদের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর প্রতিবেশী দেশগুলোর ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হতে হয়। গত বছর থেকে ভূমিবিরোধে লিপ্ত ভিয়েতনাম এর বড় উদাহরণ। ন্যাটিক্সিসের পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে চীনের সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর পর থেকে দেশটিতে চীনা পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে ২০ শতাংশের মতো।
চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক বন্ধন আরো দৃঢ় হচ্ছে। এসব অঞ্চলে অর্থ বিনিয়োগ ও আংশিকভাবে রফতানি সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশগুলোতে নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন।
চীনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো নিজেদের প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে পারছে। এশিয়ার বড় অর্থনীতির দেশটির এ ভূমিকার কারণে উভয় সংকটেও পড়তে হচ্ছে দেশগুলোকে। একদিকে অর্থনীতির স্বার্থে চীনা বিনিয়োগ ও অর্থদাতাদের যেমন ফিরিয়ে দিতে পারছে না, তেমন নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদের।
বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘চায়না ড্রিম’ প্রকল্প একটি কঠিন সমীকরণ। এ সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে এশিয়ার ছোট অর্থনীতির এসব দেশের একই সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা বেশ চ্যালেঞ্জই বটে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ