Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুদ্ধের শঙ্কায় গ্রাম ছাড়ছেন সীমান্তবর্তী ভারতীয়রা

base_1475236265-12541254

নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয় ভারতীয় বাসিন্দারা। সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারিভাবে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জানা যায়, পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার হামলার পরে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা। এজন্য গত রাত থেকে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এ ধরনের কোনো সরকারী নির্দেশ না দেওয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ নিজ উদ্যোগে সরে যাচ্ছেন।

chardike-ad

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে যখন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সার্জিকাল স্ট্রাইকের ব্যাপারে জানানো হয়, তার পরপরই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার।’

রাজ্যের ছয়টি সীমান্তবর্তী জেলার অন্তত এক হাজার গ্রাম খালি করানো হয়েছে। স্থানীয় গুরুদুয়ারাগুলো (শিখ ধর্মীয় উপাসনালয়) থেকে মাইকে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে এনে দূরবর্তী স্কুল এবং গুরুদুয়ারায় রাখা হয়েছে। তাদের দেখভালের জন্য রাজ্য সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গ্রাম ছেড়ে আসা অনেকে জানিয়েছেন, তারা উঠতি ফসল ক্ষেতে ফেলে রেখে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও পাঞ্জাব সরকার জানিয়েছে ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য রাজ্যটির পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষের সরে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি। গ্রামবাসীরা বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাই অনেকেই আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে যেতে শুরু করেছেন। বিশেষত জম্মু অঞ্চলে গতকাল থেকে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কেননা গোলাবর্ষন শুরু হলে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্তের মানুষদের পড়তে হয়। কখন কার বাড়িতে গোলা এসে পড়বে, তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।’

ভারতীয় সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালানো হয়েছে গত বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে। এসময় ভারতীয় সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশ করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্য দিক থেকে গতকাল রাতেও গুলিবর্ষন করা হয়েছে।

জম্মুর ডেপুটি কমিশনার সিমরণ দীপ সিং জানিয়েছেন, গতকাল রাত বারোটা থেকে দেড়টার মধ্যে সীমান্তের অখনূর সেক্টরের পল্লনওয়ালা, চপড়িয়াল আর সমনাম এলাকায় পাকিস্তানী নিরাপত্তা চেকপোস্ট থেকে গুলি চালানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, বাবুলাল চৌহান নামে দেশটির এক সেনাসদস্য ভুলক্রমে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করায় পাকিস্তানের সেনারা তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। তাকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি গত বুধবারের অভিযানের পরে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না ভারত। এ ধরনের পাল্টা হামলা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

এদিকে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকেও সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

যুদ্ধের আশঙ্কায় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে কাশ্মীরীরা
যুদ্ধের আশঙ্কায় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে কাশ্মীরীরা

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হলে ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এ ঘটনায় দেশটি প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এ দায় অস্বীকার করেছে। এসময় থেকেই দুই চির বৈরি প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে উভয় দেশ। এর মাঝেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে দুই দেশ বিবাদে জড়িয়ে পরে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারত সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ অভিযান পরিচালনা করে। পাকিস্তানকে উরি হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর তীব্র অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে। তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ অভিযানের মাধ্যমে মোদি প্রশাসন এ চাপ মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি  মোদিকে একজন কঠোর নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে পাকিস্তানের কাছে বার্তা প্রদান করা হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বিনা উস্কানিতে ভারতের এ ধরনের হামলাকে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন। একইসাথে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটির সেনাবাহিনী যে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও দেশটি এ অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। বলা হয়েছে গত দুই মাসে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে প্রায় আশি জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে।

সূত্র: বিবিসি