Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবার গোলাগুলি

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবার গোলাগুলি
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবার গোলাগুলি

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গতকাল আবারো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গতকাল ভোরে সংঘটিত এ গোলাগুলিতে দুই দেশের সীমান্তসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও গত শুক্রবারই প্রায় ১০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার আশপাশ অঞ্চলের ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। খবর এএফপি।

জম্মু-কাশ্মীরের পাকিস্তান সীমান্ত এলাকার ভিমবার সেক্টরে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গতকাল ভোর ৪টায় গোলাগুলি শুরু হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে খণ্ড যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিনা উসকানিতে ভারতের পক্ষ থেকে গুলি চালানো হলে পাকিস্তান তার যথাযথ জবাব দিয়েছে। ভোর ৪টা থেকে ৪ ঘণ্টাব্যাপী এ খণ্ড যুদ্ধ চলে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

chardike-ad

এদিকে গোলাগুলির এ ঘটনা ২ ঘণ্টা স্থায়ী হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তা পবন কোতোয়াল জানান, ভারতীয় অংশের আখনুরে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ এক্ষেত্রে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ গোলাগুলি ভোর ৪টায় শুরু হয়ে ২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ চালানোর দাবির দুদিন পর এ ঘটনা ঘটল। শুরু থেকেই ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে পাকিস্তান। দেশটির পক্ষ থেকে দুই সেনাসদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও এর জন্য সীমান্তের গোলাগুলিকে দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ চালানো সেনাসদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিং সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ড সদর দপ্তর পরিদর্শনের জন্য জম্মু-কাশ্মীরে যান। তার এ পরিদর্শনের পর পরই সীমান্তে গতকাল এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, সার্জিক্যাল অপারেশনের সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান। তিনি এ সফল অভিযানের জন্য তাদের প্রশংসা করেন।

পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনায় উভয় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে গতকালের এ খণ্ড যুদ্ধ বিদ্যামন আতঙ্ক বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত এরই মধ্যে দেশটির উত্তর সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। পাঞ্জাবের নশেরা ধাল্লা নামের এক গ্রাম থেকে এএফপির প্রতিনিধি জানান, সাড়ে চার হাজার গ্রামবাসীকে এরই মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গ্রামের নিরাপত্তায় শুধু গুটিকয় পুরুষ সেখানে রয়ে গেছেন। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ১৯৭১ সালে এ গ্রামের অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে এ দুই দেশ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।

নশেরা ধাল্লায় থেকে যাওয়া জামশেদ সিং জানান, আমরা অল্প কয়েকজন থেকে গেছি। কোনো চোর বা ডাকাত যেন গ্রামে ঢুকতে না পারে, সেজন্য আমরা গ্রামের প্রধান সড়কে পালাক্রমে পাহারা দিই।

একই অবস্থা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেরও। বিশেষত বাত্তাল সেক্টরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন এখন অতীতের বিষয়। ওই এলাকার এক দোকান মালিক সুজাত কাজী বলেন, আমাদের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ কেউ বাইরে বের হওয়ার সাহস পায় না।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে মুক্ত হওয়া এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত করেছে। এর মধ্যে দুটিই হয়েছে বিবাদের কেন্দ্র কাশ্মীরকে নিয়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রও ওই কাশ্মীর। তিন মাস ধরেই এ উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানি ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। এর পর থেকেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। জারি করা হয় কারফিউ। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজটি হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। ওইদিন কাশ্মীরের ভারতীয় অংশের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ সেনাসদস্য নিহত হন। এ ঘটনার দায় শুরু থেকেই পাকিস্তানের ওপর চাপায় ভারত। পরে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে সার্জিক্যাল অপারেশন পরিচালনার দাবি করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাগ্যুদ্ধ সামরিক রূপ পরিগ্রহ করে।