কোরিয়ায় শিক্ষা ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশীরা। বিশ্বের নামকরা জার্নালগুলোতে কোরিয়ায় গবেষণারত বাংলাদেশীদের অবস্থান ইর্ষনীয় পর্যায়ে। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে) প্রথমবারের মত গবেষকদের স্বীকৃতি দিতে এওয়ার্ড ফর এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ২০১৬ প্রদান করে। তিনজন গবেষককে দেওয়া হয়েছে এইবছরের বিসিকে এওয়ার্ড। ডঃ নাজমুল আবেদীন খান তাঁর মধ্যে একজন। ডঃ নাজমুল আবেদীন খানকে নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিবেদন।
দক্ষিণ কোরিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় খিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, গবেষণায় অবদান রাখা অসংখ্য খ্যাতিমান ব্যক্তিদের পদচারণা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকরাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রেখে চলেছে এক দশক ধরে। বাংলাদেশী কৃতি তরুণ বিজ্ঞানী ডঃ নাজমুল আবেদীন খান ২০০৮ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বের সাথে বাংলাদেশকে নিয়ে চলেছেন অনন্য এক অবস্থানে। তিনি বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্ট্রাক্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন।
ডঃ নাজমুল আবেদীন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পর ২০০৮ সালে খিয়ংপুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পিইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন। তাঁর পুরো পিএইচডির সময়কালটিই ছিল কৃতিত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পরিবেশ দুষণ রোধে পরিবেশ বান্ধব জীবাষ্ম জ্বালানীর প্রক্রিয়াকরনে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে পরিবেশ দুষন রোধে পরিবেশ বান্ধব জীবাষ্ম জ্বালানীর প্রক্রিয়াকরনে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর গবেষণার স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি ২০১০ সালে বি.কে. (Brain of Korea) পুরষ্কার লাভ করেন।
তিনি জীবাষ্ম জ্বালানী থেকে সালফার জাতীয় উপাদান পৃথক করার একটি ফলপ্রসু, সাশ্রয়ী পদ্ধতির উদ্ভাবন দেখিয়েছেন। সালফার জাতীয় পদার্থগুলো পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি। এই ধরনের উপাদান মানব শরীরের শ্বাঁস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত বহু রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া এসিড বৃষ্টির জন্যও এই উপদানগুলোই প্রধাণত দায়ী। এই কারণে সারা বিশ্বেই বিভিন্ন দেশে সালফার দুষণের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। তার এই উদ্ভাবন জ্বালানী থেকে সালফার মুক্ত করার জন্য বিরাট অবদান রাখবে এ ব্যপারে কোনো সন্দেহ নেই।
বিভিন্ন খ্যাতিমান বৈজ্ঞানিক জার্নালে এই সময়ের মধ্যে ডঃ নাজমুল আবেদীন খানের ৫১ টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে তিনি পাঁচটি কাজের পেটেন্ট পেয়েছেন। এছাড়া তাঁর গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন খ্যাতিমান জার্নালের প্রচ্ছদও করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টিরও অধিক পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন উদ্ভাবনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির খ্যাতিমান পত্রিকা সিউল শিনমুন এবং ওয়াই.টি.এন অন্যতম।
সর্বশেষ ডঃ নাজমুল আবেদীন খান গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য গত ১৮ ডিসেম্বর বিসিকে এওয়ার্ড ২০১৬ লাভ করেন।
উল্লেখ্য, নাজমুল আবেদীন খান ১৯৮৩ সালে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৃত মো: জয়নাল আবেদীন এবং মা সাবেকা আরজু। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি প্রথম। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এস.এস.সি. এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি সমাপ্ত করে তিনি ২০০০-০১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন।