
দুর্নীতির কেলেঙ্কারির জেরে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে’কে বরখাস্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট পার্ককে পার্লামেন্টের করা অভিশংসনের পক্ষে শুক্রবার রায় দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। বিবিসি এই সংবাদকে কেন্দ্র করে একটি খবর ছাপিয়েছে। বিবিসি বলছে একটি কুকুরছানার কারণেই প্রেসিডেন্টের পতন হলো।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয় ‘দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতির হাঁড়ির খবর যারা রাখেন – তারা বলছেন, এই ঘটনার শুরু হয়েছিল একটি কুকুরছানা নিয়ে ঝগড়া থেকে’।
ঝগড়াটি বেধেছিল প্রেসিডেন্ট পার্কের বান্ধবী ছোয়ে সুন সিল এবং তার কথিত প্রেমিক সাবেক ফেন্সিং-তারকা কো ইয়ং তাইএর মধ্যে ।
সুদর্শন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী ৪০ বছর বয়স্ক কো’র সঙ্গে ৬০ বছর বয়স্ক ছোয়ে’র সম্পর্ক নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গুজবের শেষ ছিল না। তবে তারা নিজেরা বলেন, তারা ছিলেন শুধুই বন্ধু, কখনোই প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি।
ঝগড়ার কারণ কি – তা কো পরে নিজেই বর্ণনা করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। ছোয়ে’র মেয়ের একটি পোষা কুকুরছানা ছিল এবং একদিন চোই সেই কুকুরটি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কোকে।
কো কুকুরটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। কুকুরছানাকে বাড়িতে রেখে তিনি আবার বেরিয়ে গেলেন গলফ খেলতে। কিন্তু খেলা শেষে বাড়ি ফিরে কো দেখলেন, সেখানে বসে আছেন ছোয়ে। তিনি চরম ক্ষিপ্ত – কারণ কো কুকুরটিকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হলো। ছোয়ে’র আচরণ আর গালাগালিতে কো এতটাই ক্ষুব্ধ হলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন- দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছোয়ে’র সম্পর্কের কথা তিনি ফাঁস করে দেবেন।
এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কের প্রশাসনে ছোয়ে’রপ্রভাব খাটানোর প্রমাণ সংগ্রহ করেন। এমন সব সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করলেন – যেখানে ছোয়ে প্রেসিডেন্টের সহকারীদের তার ব্যক্তিগত চাকরবাকরের মত ব্যবহার করছেন। এরপর তিনি সেসব প্রমাণ একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে তুলে দেন। তারপর সাংবাদিকরা খুঁজে বের করলেন একটি ট্যাবলেট। তাতে ছোয়ে’র সেলফি- যার পাশে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ভাষণের কাগজপত্র। তাছাড়া চোইয়ের বিভিন্ন সন্দেহজনক ব্যবসায়িক তৎপরতা নিয়েও অভিযোগ উঠে। জনমনে তৈরি হয় ব্যাপক ক্ষোভ।
শুরু হলো ব্যাপক তদন্ত। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পার্ক স্বীকার করেন, তিনি তার বান্ধবীকে সরকারের কাজকর্মে নাক গলানোর অন্যায় সুযোগ দিয়েছিলেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই সব অভিযোগই তার অভিশংসন এবং ক্ষমতা থেকে অপসারিত করল।