Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাকিব-রিয়াদ নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

shakib-mahmudullahএমন ব্যাটিং, এমন জয় স্বপ্নেই শুধু কল্পনা করা যায়। বাস্তবে খুব একটা ধরা দেয় না। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানে বেধে রাখার পর জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল; কিন্তু ৩৩ রানে তামিম, সৌম্য, সাব্বির এবং মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সমর্থকরা শুধু ভেবেছিল, কত সম্মানজনকভাবে হারা যায়!

কিন্তু টিম বাংলাদেশের পরিত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হলেন দু’জন, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরি অবিশ্বাস্য স্বপ্নকেই হাতের মুঠোয় পুরে দিলো। দু’জনের ২২৪ রানের অসাধারণ এক জুটি বাংলাদেশকে এনে দিল অবিস্মরণীয় এক জয়। সে সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের সেমির আশাও টিকিয়ে রাখলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ।

chardike-ad

অসাধারণ একটি জুটি। এমন একটি জুটিই প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। আশা ছিল তামিম ইকবাল দাঁড়াতে পারবেন। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৫ রান। তামিমের ওপরই ছিল সমস্ত আশা-ভরসা; কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই যখন তিনি আউট হয়ে গেলেন, তখন সে আশা পরিণত হলো শঙ্কায়।

২৬৫ রানের বেধে রাখার পর কী তাহলে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে না? অতৃপ্তি নিয়েই ফিরে যেতে হবে? এমনই আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দুলতে দুলতে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা যখন সাত-পাঁচ ভাবছিল, ততক্ষণে উইকেট থেকে বিদায় নিয়ে নিলেন সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার এবং মুশফিকুর রহীমও।

৩৩ রানে চার উইকেট নাই। মহা বিপর্যয়ে বলা যায় বাংলাদেশ। এই বিপর্যয় থেকে কে রক্ষা করবে? কে দেখাবে আশা? পয়া ভেন্যু সোফিয়া গার্ডেন কী তবে আজ খালি হাতেই ফেরত পাঠাবে? সমর্থকরা যখন এসব ভাবছিলেন, তখন উইকেটে নেমে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান।

সেই চেষ্টা থেকেই জুটিটাকে ধীরে ধীরে বড় করতে লাগলেন তারা দু’জন। শেষ পর্যন্ত সেই জুটির রান ১০০ পার হয়ে গেলো। এমনকি বাংলাদেশ যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল সেখান থেকে আশার আলোও দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন তারা দু’জন।

৬২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সাকিব। একটু পরেই ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন মাহমুদ উল্লাহ। দুজনে শেষ পর্যন্ত তিন অংকে পৌঁছান। ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করেন সাকিব। জয় থেকে ৯ রান দূরে থাকতে ১১৫ বলে ১১ চার এবং ১ ছক্কায় ১১৪ রানে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। এরপর ১০৭ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করে ১৬ বল হাতে রেখেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদ উল্লাহ। ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান।

এর আগে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ বোলিং করেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ২ ওভারে ১ রান দেন তিনি। বেদম মার খাওয়া মুস্তাফিজের জায়গায় বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে তরুণ এই পেসার লুক রঞ্চিকে (১৬) মুস্তাফিজের ক্যাচে পরিণত করেন।

উইকেট তুলে নেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন গতিতারকা রুবেল হোসেন। বিধ্বংসী কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে (৩৩) এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। তবে তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং অভিজ্ঞ রস টেইলর। সতীর্থের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে কিউই দলনেতা (৫৭) রানআউট হলে ভাঙে এই জুটি।

চতুর্থ উইকেটেও ৪৯ রানের জুটি গড়েন নেইল ব্রুম এবং টেইলর। জুটি আরও বড় হওয়ার আগেই দ্বিতীয়বারের মত আঘাত হানেন তাসকিন। তার বলে বিপজ্জনক টেইলরের (৬৩) ক্যাচ নেন বোলিংয়ে নিষ্প্রভ মুস্তাফিজ। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দলে ফিরেই ঝলসে উঠেন তরুণ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হেনে কিউইদর মিডল অর্ডার ছিন্নভিন্ন করে দেন। মোসাদ্দেকের করা ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে তামিম ইকবালের তালুবন্দী হন ৪০ বলে ৩৬ রান করা নেইল ব্রুম। ২ বল পরেই ০ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোরি অ্যান্ডারসন।

পরের ওভার করতে এসে আবারও আঘাত হানেন মোসাদ্দেক। ২৩ রান করা জেমস নিশামকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে পরিণত করে তৃতীয় শিকার ধরেন তিনি। এরপর মঞ্চে আবির্ভাব আগের দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে অ্যাডাম মিলানে ৭ রানে বোল্ড হয়ে যান। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রানেই থামে কিউইরা।