Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চুলের কেজি ১৮ হাজার টাকা

rajshahi-hair-tradরাজশাহী অঞ্চলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নারীদের চুলের কেনাবেচা। জেলার তানোর এবং পাশের নওগাঁ জেলার মান্দা ও নিয়ামতপুরে বাড়ছে চুলের ব্যবসা। এসব চুলের কেজি সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ তিন উপজেলার সীমান্ত এলাকা তানোরের চৌবাড়িয়ায় গড়ে উঠেছে চুলের হাট। হাট বসছে সপ্তাহে ছয়দিন। প্রতি হাটে কেনাবেচা হচ্ছে অন্তত আড়াই লাখ টাকার চুল।

এদিকে চুল ব্যবসায় এ তিন উপজেলায় ক্ষুদ্র পরিসরে গড়ে উঠেছে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। বাড়ি বাড়ি চালু এসব কেন্দ্রে কাজ করছেন গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র নারীরা।

chardike-ad

চুল ব্যবসায় জড়িতরা জানিয়েছেন, নারীরা আচড়ানোর পরে যে চুল সংরক্ষণ করেন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরিওয়ালারা সেই চুল কেনন। এরপর তা নেন প্রক্রিয়াজতকরণ কেন্দ্রে। সেখানে চুল পরিষ্কার করে বাছাই করা হয়।

প্রক্রিয়াজতকরণ কেন্দ্র থেকে বাছাই করা চুল নেয়া হয় চৌবাড়িয়া হাটে। মঙ্গলবার বাদে সপ্তায় ছয় দিনই বসে চুলের হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা চুল নিয়ে যান। রাজশাহী ছাড়াও দেশের আরো বেশ কিছু এলাকায় গড়ে উঠেছে চুল বিক্রয়কেন্দ্র।

বাংলাদেশ থেকে চুল রফতানি হয় ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, চিন, জাপান ও কোরিয়ায়। বটিচুল, পরচুলা ও অন্যান্য সৌখিন জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এ চুল। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ছে বাংলাদেশের চুলের।

জেলার তানোর উপজেলার মাদারীপুরে ছোটবড় মিলিয়ে ছয় চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রগুলো গড়ে উঠেছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্মীরা কাজ করেন এখানে। কর্মীদের তালিকায় নারীদের সংখ্যা বেশি। মুলত চুল জট ছাড়ানোর কাজ করেন তারা। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত এলাকার প্রায় কয়েকশ পরিবার।

চুলের জট ছড়ানোর কাজে নিয়েজিত নারী কর্মী কাজলি বেগম জানান, তাদের কাছে আসা চুল থেকে নোংরা ও জট বাঁধা চুল আলাদা করেন। এরপর জট ছাড়ানো হয়। কারখানার পুরুষ কর্মীরা চুলগুলো পরিষ্কার করেন। এরপর রোদে শুকিয়ে তারাই ধাপে ধাপে আলাদা করে বিক্রির উপযোগী করেন। প্রত্যেক নারী কর্মী দৈনিক ১২০ টাকা করে মজুরি পান।

আরেক নারী কর্মী নিপা বেওয়া জানান, সারাদিন একটানা বসেই কাজ করতে হয় তাদের। এছাড়া জটবাঁধা চুলের ময়লা নাক ও মুখের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে সর্দি-কাশি লেগেই থাকে তাদের। তা সত্ত্বেও এলাকায় কাজ না থাকায় এ কাজ করছেন তারা। এলাকার গৃহিনী, কৃষাণী এমনকি শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হচ্ছে এ কাজে।

মাদারীপুরের একটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের মালিক সেলিম হোসেন। তিনি জানান, ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে তারা ৩৫০০ টাকা কেজি দরে কেনেন। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এক কেজি চুলের ওজন হয় ৬৫০ গ্রাম। তারা সেই চুল প্রতিকেজি বিক্রি করেন ৫৫০০ টাকায়। তবে ১২ ইঞ্চির বেশি লম্বা চুল সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

চৌবাড়িয়া হাটের চুল ব্যবসায়ী রায়হান আলী জানিয়েছেন, তানোর, নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলায় গড়ে ওঠা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রগুলো থেকে চুল আসে এ হাটে। চুল কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররাও আসেন। হাটে প্রতিদিন অন্তত ২০ কেজি করে করে চুল বিক্রি হয়। সবমিলিয়ে বেচাকেনা হয় অন্তত আড়াই লাখ টাকার। দিন দিন বেচাকেনা জমজমাট হচ্ছে বলে জানালেন এই চুল ব্যবসায়ী।

তবে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এখনও এ অঞ্চলে চুল ব্যবসা আলাদা শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন প্রামাণিক।

অন্যদিকে, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. শওকত আলী বলেন, এটি সম্ভাবনাময় একটি খাত। এতে যুক্ত হয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা পেলে এ খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।