যুক্তরাষ্ট্রগামী সব ফ্লাইটের যাত্রীদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নতুন নিয়ম কার্যকর হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এয়ারলাইন্সগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, উড়োজাহাজে যাত্রীদের সঙ্গে গোপনে বিস্ফোরক বহনের হুমকি ঠেকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যার আওতায় থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও।
নতুন নিয়মে যুক্তরাষ্ট্রগামী উড়োজাহাজে চড়ার আগেই চেক ইন পয়েন্ট অথবা বোর্ডিং গেইটে যাত্রীদের ‘সংক্ষিপ্ত’ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। সেখানে তাদের সব ধরনের ‘ব্যাক-গ্রাউন্ড’ যাচাই করা হবে। সঙ্গে থাকা মালামাল তল্লাশিতেও থাকবে কড়াকড়ি।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের (টিএসএ) মুখপাত্র লিসা ফার্বস্টাইন বুধবার বলেন, “নিরাপত্তার এ বিধি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বিদেশি পর্যটক, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক- সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনা করে এমন সব এয়ারলাইন্সকেই নতুন এ নিয়ম মানতে হবে।”
অর্থাৎ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া বা আফ্রিকার যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে, সেখানেই এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনায় তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নতুন নিয়ম কর্যকর করতে হবে।
রয়টার্স লিখেছে, প্রতিদিন ১০৫টি দেশের ২৮০টি বিমানবন্দর থেকে ১৮০টি এয়ারলাইন্সের যুক্তরাষ্ট্রগামী ২ হাজার ১০০ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের তিন লাখ ২৫ হাজার যাত্রীকে এই নতুন নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
আর তাতে যাত্রী ব্যবস্থাপনায় সময় লাগবে বেশি; বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর কাজে জটিলতা ও যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও ব্যবসায়ী সংগঠন।
এর আগে গত জুনে এক আদেশে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি এবং ইউরোপের দুটি বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে যাত্রীদের হাতব্যাগে ল্যাপটপসহ বড় আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ১২০ দিনের জন্যে। সেই নিষেধাজ্ঞার জুলাইয়ে তুলে নেওয়ার সময়ই ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, সময়ে সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও নতুন কড়াকড়ি আসতে পারে।
এর ধারাবাহিকতায় বুধবার আকস্মিক এক সার্কুলারে নতুন নিয়ম জারি করে বৃহস্পতিবার থেকেই তা কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। টিএসএ থেকে এয়ারলাইন্সগুলোকে জানানো হয়েছে, নতুন নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা ১২০ দিন সময় পাবে।
এমিরেটস, ইতিহাদ, কুয়েত, কাতার, সউদি এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গ কথা বলে জানা গেছে, নতুন নিয়ম কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের একটি বিশেষ ফরম দেওয়া হবে। সেখানে যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
কী কী মাল বহন করছেন, কী কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বা কোন দেশ থেকে ফিরছেন- এসব প্রশ্নের উত্তর সেখানে দিতে হবে। পাশাপাশি যাত্রীদের সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।
লিসা ফার্বস্টাইন বলেন, যাত্রীর কাছে থাকা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোকে বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে। ফলে এতদিনের নিয়মে একজন যাত্রীর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে যে সময় লাগত, তারচেয়ে বেশি সময় লাগবে। তবে সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
আর ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিইও আলেক্সান্দ্রে ডি জুনিয়াক বলেছেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই হঠাৎ যেভাবে এই আদেশ জারি করল, তা ‘খুবই অদ্ভুত’।