Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সংসার করলে ৫ লাখ, না করলে ১ লাখ!

sharminসংসার করলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে, সংসার না করলে দিতে হবে এক লাখ! অতঃপর নগদ এক লাখ টাকা স্বামীকে মুক্তিপণ দিতে হয়েছে গৃহবধূ শারমিনকে (১৭)। তবে এতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

গরম খুন্তি দিয়ে ডান হাতের কনুইয়ের নিচে ছ্যাঁকা দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে শারমিনকে। মাথার চুল টেনে ছিড়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে স্বামী আব্দুস সালাম ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। চিৎকার করলে রাস্তার লোকজন এগিয়ে আসায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। তবে এরপর নিরীহ বাবা-মাকে ডেকে জোরপূর্বক স্ত্রীকে দিয়ে তালাকনামায় স্বাক্ষর করানো হয়েছে। ঘটনাটি পাবনার ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের গাঁওগোয়াল ফকিরপাড়া গ্রামের।

chardike-ad

যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ শারমিন আক্তারের ওপর এসব নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে। ঘটনার শিকার শারমিন উচ্চ মাধ্যমিকের একজন ছাত্রী ও মুলাডুলি বাঘহাছলা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল খন্দকারের মেয়ে।

স্বজনদের সহায়তায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে এসে গত শুক্রবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন শারমিন। এর আগে রাত ৮টার দিকে শহরের কলেজ রোডে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে ওই রাতেই তিনি বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে এজাহার জমা দেন। তবে আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুলিশ সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি। বর্তমানে ওই গৃহবধূ তার বাবার বাড়িতে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শারমিন জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৪ সালে উপজেলার সাহাপুরের গাঁওগোয়াল ফকিরপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ হাসানের ছেলে আব্দুস সালাম ফকিরের সঙ্গে তার বাল্যবিয়ে হয়। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে স্বামী আব্দুস সালাম, শাশুড়ি ঝর্ণা বেগম ও ননদ দিলরুবা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা-মা আব্দুস সালামকে নগদ দুই লাখ টাকা, আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার, একটি বড় কাঠের আলমারি, ড্রেসিং টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে দেন।

এরপরও নির্যাতন থামেনি। শ্বশুর বাড়িতে থাকতে হলে তাকে আরও পাঁচ লাখ দিতে হবে বলে তাকে জানিয়ে দেন স্বামী আব্দুস সালাম। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হতো। এ অবস্থায় প্রায় এক বছর আগে যৌতুকের দাবিতে হত্যার হুমকি দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি বাবার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

শারমিন অভিযোগ করেন, গত ২৫ অক্টোবর পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার জন্য তিনি বাবার বাড়ি থেকে কলেজে যান। সেখান থেকে জোর করে তার বাড়িতে তুলে নিয়ে যান আব্দুস সালাম। সেখানে নিয়ে মারধর করা হয় তাকে। পরদিন বৃহস্পতিবার তাকে বাবার থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে বলা হয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে শাশুড়ি ও ননদের সহযোগিতায় তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বুক-পিট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন আব্দুস সালাম। একপর্যায়ে আগুনে পোড়ানো গরম খুন্তি দিয়ে তার ডান হাতের কনুইয়ের নিচে ছ্যাঁকা দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। এখনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি। তবে মামলা নথিভুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে।”

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ