Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চীনের সঙ্গে ৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার চুক্তি

bangladesh-china-flagচীনের সঙ্গে আরও একটি প্রকল্পে কাঠামোগত চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় ‘ইনস্টলমেন্ট অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৫ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) প্রায় ৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং স্বাক্ষর করেন। এ সময় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের তাগিদ দেন রাষ্ট্রদূত।

chardike-ad

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল। চুক্তির আগে অনুদান হিসেবে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি হস্তান্তরে সনদে সই করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

নসরুল হামিদ বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। কাজ শুরু হবে জানুয়ারি মাসে। বাস্তবায়ন শেষ হতে ৩৬ মাস সময় লাগবে। বর্তমানে তেলেবাহী জাহাজ আনলোডিং করতে ১২দিন সময় লাগে। কিন্তু এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। সেই সঙ্গে সিস্টেম লস কমে আসবে। ফলে প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নতুন রিফাইনারি তৈরি করছি। ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার সঙ্গে রিফাইনারি তৈরির কাজও শেষ হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ থাকলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। মানুষের কাছে টাকা থাকবে। তখন বিদ্যুৎ -গ্যাসের দাম কম বা বেশি সেটি কোনো ব্যাপার হবে না।

চুক্তি শেষে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমানে শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি দুর্যোগ। এ সমস্যার কারণে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে পাশে আছি। আশা করছি, এ সমস্যাটি যথাসম্ভব দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আমরা আশা করছি এ দুই ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র বসে দ্বি-পাক্ষিক ভিত্তিতে সমাধান বের করে ফেলবে।

কাজী শফিকুল আযম বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমরা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে চীনের অর্থায়ন নিশ্চিত হলো। এরপরই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং ঢাকা-সিলেট সগড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাঠামোগত চুক্তি হবে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর এবং চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে সমঝাতা স্বাক্ষর হওয়ার ১১ মাস পর এ কাঠামোগত চুক্তি হলো। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন মোট যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তার মধ্যে গভর্নমেন্ট কনশেশনাল লোন বা নমনীয় শর্তের ঋণ রয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। বায়ার্স ক্রেডিট অর্থাৎ কিছুটা কঠিন শর্তের ঋণ রয়েছে ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। ঋণের ফ্লাট সুদের হার হবে ২ শতাংশ। এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রতিশ্রুতি ফি এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ফি দিতে হবে। এ ছাড়া ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (রেয়াতকাল) ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন করবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোতে বড় ক্রড ভেসেল হ্যান্ডেল করা সম্ভব নয়। কেননা কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম এসব সীমাবদ্ধতার কারণে বড় ক্রুড ভেসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করা হয়। এরপর ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড আনলোডিং করা হয়। এ সব সমস্যা হতে উত্তোরণের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে,পাইপ লাইন এবং সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল তৈরি। অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনশোরে ৭৪ কিলোমিটার, সর্বমোট ২২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন (এর মধ্যে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের ৩২ কিলোমিটার এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৮৮ কিলোমিটার) স্থাপন। মহেশখালী দ্বীপে ট্যাঙ্ক ফার্ম ও পাম্প স্টেশন স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ, অধিযাচন ও ক্ষতিপূরণ, বিশেষজ্ঞ সেবা এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ করা হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ