Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফুটপাতে চা বিক্রি করে ফারুকের মাসে আয় তিন লাখ টাকা

faruk‘মামা, এই নেন টাকা। আমাদের দুই কাপ চা দেন।’ এ কথা বলে এক তরুণী পঞ্চাশ টাকার একটি নোট এগিয়ে দিতেই দোকানি হেসে বলেন, ‘মামা, আমি অ্যাডভান্স টাকা নেই না। আয়েশ কইরা গরম চায়ে ফুঁ দিয়া খাওয়া শেষ অইলে টাকা দিয়েন। এইডাই আমার ব্যবসার ধর্ম।’ দোকানির কথা পেয়ে লজ্জা পেয়ে তরুণীরা বললেন, ‌‘আচ্ছা, ঠিক আছে মামা। দেন আগে পান করি, তারপর বিল দেবো।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউমার্কেটের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে একটি ছোট চায়ের দোকানে দোকানি ও গ্রাহকদের মধ্যে এমন কথোপকথন শুনতে পাওয়া যায়।

chardike-ad

ছোট্ট একটি টং দোকানে বড় একটি ডেকচিতে গরম করা হচ্ছে দুধ। আগুনের তাপে চুলায় সাদা দুধ লালচে আকার ধারণ করেছে। ঢাকনা তুলে ডেকচি থেকে দুধ মগে করে তুলে একটি কেটলিতে ঢেলে রাখলেন দোকানি। এবার ব্যস্ত হাতে দুই ডজনেরও বেশি কাপ থরে থরে সাজিয়ে রেখে প্রথমে চিনি, দুধ ও চায়ের পানি ঢাললেন। দ্রুতগতিতে প্রতিটি কাপে পরিমাণ মতো সব উপাদান দিয়ে চা তৈরি করার পর তার দুই সহকারী গ্রাহকদের হাতে চায়ের কাপ তুলে দেন। অধিকাংশ গ্রাহক এক কাপ গরম চা খেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আরেককাপ খেয়ে তবেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বিদায় নিচ্ছেন।

farukচা বিক্রেতার নাম ওমর ফারুক। নিউমার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যবয়সী ওমর ফারুক ৮-১০ বছর ধরে এই মার্কেটে খাবার বিক্রির কাজ করেন। এক সময় মাত্র একশ টাকা বেতনে চাকরি করলেও পরবর্তীতে যে মালিকের অধীনে চাকরি করতেন সেই মালিকের কাছ থেকেই চায়ের দোকানটি কিনে নেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

ওমর ফারুকের সহকর্মী এক তরুণ জানান, কাকডাকা ভোর থেকে দুই কর্মচারী চায়ের দোকান খোলার প্রস্তুতি শুরু করেন। সকাল ৯টা থেকে চা বিক্রি শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। প্রতি কাপ চায়ের মূল্য ১০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার কাপ চা বিক্রি হয়। এ হিসেবে মাসে গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার চা বিক্রি হয়। তবে শুক্রবার ও ছুটির দিনে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ কাপ চা বিক্রি হয়। নিউমার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা দোকানে বসেই ওমর ফারুকের চা খেয়ে কাজে মনোযোগ দেন।

মতিউর রহমান নামে নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, এক সময় যারা নিউমার্কেটে নিয়মিত আড্ডা মারতেন ও বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় আছেন তাদের অনেকেই এখনও এদিকে এলে ওমর ফারুকের হাতে বানানো এক কাপ চা না খেয়ে যান না। রমজান মাসে ইফতারের পর দোকানে খুব ভিড় হয়। অনেক সময় এক কাপ চায়ের জন্য আধাঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়।

তবে ওমর ফারুক নিজের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে নারাজ। আলাপকালে তিনি জানান, এক সময় অনেক কষ্ট করছি। অহন সুখের লাগাল পাইছি।