Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সফটওয়্যারে স্বনির্ভরতা অর্জনে সচেষ্ট স্যামসাং

সিউল, ৩১ অক্টোবর ২০১৩:

প্রযুক্তি বাজারের অনেকটুকু জায়গাজুড়ে রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল। অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের বিভিন্ন অ্যাপ, অপারেটিং সিস্টেমের মতো সফটওয়্যারগুলোর জন্য নির্ভর করছে গুগলের ওপর। কিন্তু গুগলের এ ছায়া থেকে বেরিয়া আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা স্যামসাং। কোম্পানিটি সম্প্রতি সফটওয়্যার ডেভেলপারদের নিয়ে একটি সম্মেলন করেছে। এ সম্মেলনেই দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিটি এ ঘোষণা দেয়। খবর এএফপির।

chardike-ad

Samsung-Logoএর আগে সফটওয়্যার নির্মাতা বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময় ডেভেলপারদের নিয়ে সম্মেলন করেছে। স্যামসাং এবারই প্রথম সফটওয়্যার ডেভেলপারদের নিয়ে কোনো সম্মেলন করল। এ সম্মেলনে কোম্পানিটি গুগলের ওপর থেকে নিজেদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। গুগলের ওপর নির্ভরতার কারণে অনেক কোম্পানিই তাদের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে প্রকাশ করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা। এ কারণেই স্যামসাং তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তারা।

স্মার্টফোনের বর্তমান বাজারকে মাতিয়ে রেখেছে গুগলের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি গুগল তৈরি করলেও এটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে স্যামসাং। স্যামসাং ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিও এ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন করছে। কিন্তু এবার এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে স্যামসাং। অ্যান্ড্রয়েড দিয়ে অধিক মুনাফা হলেও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে এখন থেকে কোম্পানিটি নিজেই অপারেটিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করবে।

গত মঙ্গলবার সফটওয়্যার ডেভেলপারদের এ সম্মেলনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন অংশগ্রহণ করেন। সানফ্রান্সিসকোর ওয়েস্টিন সেন্ট ফ্রান্সিস হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটিতে স্যামসাং তাদের সফটওয়্যার নির্মাণের বিভিন্ন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে। লিকিকন ভ্যালির প্রযুক্তি বিশ্লেষক রব এনডারলে বলেন, স্যামসাং এখন তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে। কোম্পানিটি তাদের নিজস্ব পণ্যের মাধ্যমে গ্রাহকদের মন জোগাড়ের চেষ্টা করবে। এ ধরনের চেষ্টা গ্রাহকদের কাছে কোম্পানিটির গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্মেলনে স্যামসাং তাদের এ ধরনের পরিকল্পনায় সফটওয়্যার ডেভেলপারদের সাহায্য চেয়েছে বলেও জানান এনডারলে। কোম্পানিটির মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ওন পিউ হং বলেন, ‘বিশ্বের এখন অর্ধশত কোটির মতো প্রযুক্তিপণ্য রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ পণ্যই নির্মাতা কোম্পানির স্বকীয়তার পরিচায়ক। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক পণ্য তৈরির ফলে লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়লেও গ্রাহকদের কাছে আমাদের কোম্পানির প্রচারণা খুব কমই হচ্ছে। বরং এ সফটওয়্যারগুলোর মাধ্যমে গুগলের প্রচারই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবার আমরা গুগলের ওপর থেকে নিজেদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি, গ্রাহকরাও এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করবেন।’

স্যামসাং তাদের নিজস্ব পণ্য তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে। কোম্পানিটি সম্প্রতি নিজেদের তৈরি বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য বাজারে ছাড়বে বলে জানায়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশন ও আরো অনেক পণ্য। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানিটি টাইজেন নামে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছে বলে জানান এনডারলি। আগামীতে কোম্পানিটির বিভিন্ন পণ্যে এ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি। কোম্পানিটি তাদের এ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছে। সম্মেলনে কোম্পানিটি সফটওয়্যার ডেভেলপারদের তাদের অপারেটিং সিস্টেমটির জন্য বিভিন্ন অ্যাপ তৈরির আমন্ত্রণ জানান।

গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটির জন্য বিভিন্ন সময় আকর্ষণীয় হরেক রকমের অ্যাপ তৈরি করেছে। এ অ্যাপগুলো গ্রাহকদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটির প্রতি আকৃষ্ট করেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। এছাড়া কোম্পানিটি তাদের বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকদের ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

এবার স্যামসাংও তাদের অপারেটিং সিস্টেমের আকর্ষণীয় হরেক রকমের অ্যাপ তৈরি করবে বলে জানান এনডারলে। তবে এ খাতে কোম্পানিটির সাফল্য তাদের সফটওয়্যারগুলোর গুণগত মানের ওপরই নির্ভর করবে বলেও জানান তিনি।

কোম্পানিটি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেকর্ড পরিমাণে মুনাফা করে বলে প্রতিবেদনে জানায়। এ সময় তারা ৮ লাখ ২৪ হাজার কোটি ওন মুনাফা অর্জন করে, যেখানে এক বছর আগেও কোম্পানিটির অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৫৬ কোটি ওন। স্মার্টফোন গ্যালাক্সি এস ও মেমোরি চিপ ব্যবসার কারণেই কোম্পানিটি এ পরিমাণ মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে জানান বাজার বিশ্লেষকরা।