Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন : বিএনপির পাশে নেই জামায়াত

bnpবিএনপিকে এড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। উনিশ বছর ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকেও দূরে রয়েছে। জোটের বৈঠকে দলটি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজপথে নামছে না।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এখনই তারা আন্দোলনে নামছে না। কারণ, খালেদা জিয়ার সাজা বিএনপির দলীয় ইস্যু। বিএনপির ‘আন্দোলনে’ যোগ দিয়ে সরকারের সঙ্গে নতুন করে বিরোধে জড়াতে রাজি নয় কোণঠাসা জামায়াত।

chardike-ad

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোমবার সারাদেশে মানববন্ধন করে বিএনপি। গত রোববার ২০ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জোটের ব্যানারে মানববন্ধন করা হবে। সব শরিক দল যোগ দেবে। বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করলেও গতকাল জামায়াতের কোনো নেতাই পথে নামেননি। শুধু ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে একটি দল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির মানববন্ধনে ২০ মিনিটের জন্য যোগ দিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের জেল দেন। ওই দিনই বিবৃতির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজার নিন্দা করলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘ধরপাকড়ে’ মুখ খোলেনি জামায়াত।

তবে একাধিক জামায়াত নেতা বলেছেন, দেড় যুগের মিত্রতা থাকলেও জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে জোটের ইস্যু মনে করছেন না তারা। তা ছাড়া সরকারের ‘দমনপীড়নে’র কারণে জামায়াত দলীয় কর্মসূচিই পালন করতে পারছে না। দলীয় কার্যালয় খুলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সমর্থনে আন্দোলনে নামলে জামায়াতের বিরুদ্ধে ধরপাকড় জোরালো হবে। জোট মিত্রের জন্য আবারও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে নারাজ জামায়াত।

জামায়াত নেতাদের মতে, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, তা এখনও নিশ্চিত না হলেও এবার বিএনপি ভোটে অংশ নেবে। তাই এ সময়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। নির্বাচনমুখী জামায়াতও ভোটের আগে সরকারের সঙ্গে বিরোধ বাড়াতে চায় না।

বিএনপি-জামায়াত দুবার জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছে, একবার সরকার পরিচালনা করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই তাদের সখ্য কমতে শুরু করে। তবে দু’দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একত্রে বর্জন করে। কিন্তু উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছে যে যার মতো। ২০১৫ সালে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস একত্রে আন্দোলন করলেও তাদের সম্পর্কের দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।

গত অক্টোবরে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ আট কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হন। তারা এখনও কারাগারে। তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালের দিন দুপুরবেলায় সমর্থনের কথা জানায় বিএনপি। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর কর্মসূচিতে বিএনপির সমর্থন ছিল না। একে জামায়াতের দলীয় ইস্যু বলে ‘এড়িয়ে যায়’ বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলার রায়কেও বিএনপির দলীয় ইস্যু হিসেবে দেখছে জামায়াত।

তবে জামায়াত নেতারা বলেছেন, অতীতে বিএনপির সমর্থন না পাওয়ার কারণে নয়, নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যই তারা কঠোর আন্দোলনে নারাজ। ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ‘আন্দোলনে’ বিএনপিকে ‘সর্বাত্মক সমর্থন’ দিয়ে রাজপথে ছিল জামায়াত। তাদের হিসাবে, এ আন্দোলনে জড়িয়ে তাদের তিন লাখ ৬০ হাজার নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়েছেন। শতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষ-সহিংসতায়। আন্দোলনে নামলে আবারও একই অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির জন্য ঝুঁকি নিয়ে পথে নামতে আগ্রহী নয় জামায়াত।

সূত্র- সমকাল