Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের নামে মোবাইল কোম্পানির প্রতারণা

gp-emetgency-balanceঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বাবলু রহমান। কয়েকদিন আগে গাড়িতে যশোর যাওয়ার পথে কথা বলার সময় তার মোবাইল ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়।

কিন্তু, তখনও বাবলুর জরুরি আলাপ শেষ হয়নি। চলতি পথে কোনো উপায় না দেখে গ্রামীণফোন থেকে ১০ টাকা ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নেন তিনি। তবে তখন ঠিক কত টাকা ব্যালেন্স তিনি পেয়েছেন, জানতে পারেননি।

chardike-ad

মাত্র ১০ মিনিট কথা বলার পরই আবার ব্যালেন্স শেষ। এরপর গাড়ি থেকে নেমে ৫০ টাকা মোবাইলে রির্চাজ করেন বাবলু রহমান। রিচার্জের পর ব্যালেন্স চেক করে দেখেন মাত্র ২০ টাকা আছে। তখনও অবাক হওয়ার বাকি। এবার মোবাইলে একটি এসএমএস আসল, যার সহজ বাংলা- আপনার বকেয়া ৩০ টাকা পরিশোধ হয়েছে।

এবার বাবলু রহমান বুঝতে পারলেন, তিনি ঠিক কোথায় ধরা খেয়েছেন! নিয়েছেন ১০ টাকা। মুহূর্তে তা বেড়ে হয়ে গেছে ৩০ টাকা। কিন্তু, কথাও তো বললেন মাত্র ১০ মিনিট, তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায়?

ইমারজেন্সি ব্যালেন্স দিয়েই প্রতারণা। সেটি বাদ দিলেও মাত্র ১০ মিনিটের জন্য ৩০ টাকা খরচ হবে, এটিকে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের ভয়াবহ প্রতারণা বলে আখ্যা দেন বাবলু রহমান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আগে কখনও ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নেইনি। সেদিন বিপদে পড়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু, এটাতো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স না, রীতিমত চোখ বেঁধে ডাকাতি।’

বাবলুর ভাষ্যে, বিপদের সময় সহযোগিতার কথা বলে গ্রামীণফোন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র মো. মাসুদও গ্রামীণফোনের ইমারজেন্সি ব্যালেন্স সেবাকে ‘জালিয়াতি’ বলে অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মোবাইলে ৯ টাকা ছিল। কিন্তু, কম টাকা আছে জানিয়ে কল করতে দেয়া হয়নি। আবার ‘যথেষ্ট টাকা আছে’ যুক্তি দেখিয়ে ইমারজেন্সি ব্যালেন্সও দেয়নি। পরে মোবাইলে থাকা ওই ৯ টাকা শেষ হওয়ার পর আমি আবারও চেষ্টা করি। কিন্তু, ওই সুবিধা আমি পাইনি। অথচ যখন রিচার্জ করলাম, তারা ৪০ টাকা কেটে নিল।’

মাসুদ বলেন, ‘এরপর আমি কাস্টমার কেয়ারে কথা বললে তারা জানায়- আমার নাকি লোন নেয়া ছিল। কিছুই করার নেই। গ্রামীণফোন তো মানুষের সঙ্গে ডাকাতি শুরু করেছে। আর কেউ তাদের কিছু বলছেও না।’

মোবাইলে যথেষ্ট ব্যালেন্স না থাকলে *1010*1#- এ ডায়াল করে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ‘ইমারজেন্সি ব্যালেন্স’ পাওয়া যাবে বলে গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। পরবর্তী বিল রিচার্জে ওই টাকা কেটে নেয়ার কথা। বিপদের সময় কিছু টাকা ধার দিয়ে এভাবেই গ্রামীণফোন গ্রাহকদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করে চলেছে।

শুধু বাবলু রহমান কিংবা মো. মাসুদ নন, গ্রামীণফোনের ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের এমন প্রতারণার শিকার দেশের লাখ লাখ মোবাইল গ্রাহক। গ্রামীণফোনসহ টেলিকম কোম্পানিগুলোর প্রতারণায় বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আর গ্রামীণফোনসহ মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিদিন এমন কয়েকশ’ অভিযোগ জমা পড়ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে।

সংস্থাটি সূত্রে জানা গেছে, গতবছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৫৯১টি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করে। এর ফলে আমরা গতবছরের মে থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তিতে পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে ভোক্তারা এখনও লিখিত অভিযোগ করছেন।’

তিনি জানান, রিট নিষ্পত্তি হলে এসব অভিযোগের সুরাহা হবে। একটি অভিযোগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করতে পারে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। সেই জরিমানার ২৫ ভাগ অর্থ দেয়া হয় সেই অভিযোগকারীকে।

গ্রামীণফোনের প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘শুধু গ্রামীণফোন নয়, এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসিকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। আমি বিটিআরসিতে নিজে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিটিআরসিকে বলেছি- এ ধরনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে। অতীতে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সেটা আমি জানি না। আমি এখনও বলছি- টেলিকম কোম্পানিগুলোর সেবার মান আমার কাছে ভালো মনে হয়নি।’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘শুধু গ্রামীণফোন নয়, ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা করছে সব টেলিকম কোম্পানি।’

তিনি বলেন, ‘টেলিকম কোম্পানির প্রতারণার তো কোনো শেষ নেই। পদে পদে প্রতারণা করছে। দেখার কেউ নেই। গ্রামীণফোনের প্রতারণা তো আরও ভয়াবহ। দেশের সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। সরকারের উচিত এদের লাগাম টেনে ধরা।’

টেলিকম কোম্পানিগুলোর প্রতারণার বিষয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের একটা অভিযোগ সেল রয়েছে। সেখানে অভিযোগ আসা মাত্র একটি কমিটি করা হয়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ দেন, অবশ্যই আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। টেলিকম কোম্পানিগুলো গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করছে কিনা, সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।’

সৌজন্যে- পরিবর্তন ডটকম