Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হোয়াইট হাউসে ৮ দিনও টিকতে পারলেন না বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা

rumanaযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে শপথ নেওয়ার আট দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুসলিম নারী কর্মী রুমানা আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত একটি কলামে খবরটি জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন নারী।

২০১১ সালে হোয়াইট হাউসে নিযুক্ত হয়েছিলেন রুমানা আহমেদ। ১২ বছর বয়স থেকে তিনি নিয়মিত হিজাব পরেন। ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশের সেবায় ট্রাম্পের প্রশাসনে থেকে যাওয়ার মনস্থির করেছিলেন তিনি। তার আশা ছিল, নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীরা ইসলাম এবং আমেরিকার মুসলিম নাগরিকদের বেলায় খুব একটা পার্থক্য হয়ে দাঁড়াবেন না। কিন্তু তার সেই আশায় গুড়েবালি!

chardike-ad

কলামে রুমানা আহমেদ লিখেছেন, ‘আমার বেশ কয়েকজন আমেরিকান মুসলিম সহকর্মীর মতো আমিও গত বছরের বেশিরভাগ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে আমাদের গোষ্ঠীর মানহানি করেছেন তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। এসব সত্ত্বেও কিংবা হয়তো এ কারণেই ভেবেছিলাম জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মী হিসেবে ট্রাম্পের প্রশাসনে থাকার চেষ্টা করে দেখি।’

কিন্তু রুমানা আহমেদ টিকতে পেরেছেন মাত্র আট দিন। গত ২৭ জানুয়ারি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অস্থায়ীভাবে ও সিরীয় শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সই করার কারণেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। তবে আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে এই আদেশ সাময়িকভাবে থেমে যায়।

কয়েকদিনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে এই আদেশ পুনর্গঠন করা হবে বলে জানান রুমানা আহমেদ। তিনি আরও লিখেছেন, ‘যে প্রশাসন আমাকে ও আমার মতো মানুষকে নিজেদের নাগরিক মনে না করে উল্টো হুমকি হিসেবে দেখে, তাদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে বেশিদিন টিকতে পারবো না জানতাম।’ তার দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জুজুকে তুরুপের তাস হিসেবে নিয়ে মুসলিমদেরকে ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সমর্থক দাবি করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কলামে রুমানা আহমেদ জানিয়েছেন, মূলত মুসলিমদের লক্ষ্য রেখে মৌলবাদী সন্ত্রাস পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে আইএস’কে সামনে টেনে এনে চরমপন্থীদের সহিংসতা প্রতিরোধের কর্মসূচি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্পের প্রশাসন। এর মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য বেড়ে যাবে আশঙ্কাজনক হারে। তাই নতুন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নড়েচড়ে বসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তার মতে, হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নির্দলীয় জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনি বিশেষজ্ঞদের খাটো করেছে প্রেসিডেন্ট সমর্থিত পুরো কাঠামো। তিনি মনে করেন, আমেরিকায় এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের যোগাযোগ উপদেষ্টা মাইকেল অ্যানটনের কাছে পদত্যাগের কারণ বর্ণনা করেছেন রুমানা আহমেদ। ‘তাকে বলেছি আমাকে দায়িত্ব ছাড়তেই হবে। কারণ আমেরিকার সবচেয়ে ঐতিহাসিক ভবনটিতে একটি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই অন্যদের অবমাননা করার পাঁয়তারা চলছে। একজন মার্কিন ও একজন মুসলিম হিসেবে আমার মতামতকে অপমান করা হয়েছে। সব শুনে তিনি আমার দিকে চেয়ে থাকলেন এবং কিছুই বলেননি। পরে জানতে পেরেছি তিনি ছদ্মনামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন। এতে বিভিন্ন জাতিগত বৈচিত্রকে দুর্বলতা এবং ইসলামকে পশ্চিমা আধুনিকতার সঙ্গে বেমানান জানিয়ে স্বৈরতন্ত্রের গুণকীর্তন করেছেন তিনি’— কলামে এসবও লিখেছেন রুমানা।

রুমানা আহমেদের বাবা-মা ছিলেন বাংলাদেশি। ১৯৭৮ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তার মা কাজ করতেন ক্যাশিয়ার হিসেবে। পরে ডে-কেয়ার ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বাবা কর্মরত ছিলেন ব্যাংক অব আমেরিকায়। ব্যাংকটির সদর দফতরে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও পদোন্নতি পান তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৯৫ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাবাকে হারান রুমানা।

কলামে বাবার স্মৃতি রোমন্থন করে রুমানা আহমেদ লিখেছেন, “বাবা আমাকে প্রায়ই ইসলামি মতাদর্শে অনুপ্রাণিত একটি বাংলা প্রবাদ বলতেন। তা হলো— ‘কোনো মানুষ তোমাকে ফেলে দিলে নিজের চেষ্টায় উঠে তার দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে ভাই বলে সম্বোধন করো’। আমেরিকার ইতিহাসও যে হোঁচট খায়নি তা নয়। তবে এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সংগ্রাম ও সহানুভূতির মাধ্যমে হাত ধরে এই জাতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। এজন্যই আমার বাবা-মা এখানে এসেছিলেন। তাই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় সহপাঠীদের বলতাম, এই দেশটা আমার মা-বাবার মতো অভিবাসীদের ছাড়া এগোতে পারতো না।’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে মুসলিম হিসেবে আমেরিকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন রুমানা আহমেদ। তখন থেকে চারপাশের লোকজন তাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ উল্লেখ করে নানান প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতো। তবে স্নাতক সম্পন্ন করার পর বারাক ওবামায় অনুপ্রাণিত হয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল) হয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।

সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন