Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নেতা ‘বিএনপির’, মার্কা নৌকা

স্থানীয় সরকারের যেসব আসনে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে নেত্রকোণায় মোহনগঞ্জের তেতুলিয়া ইউনিয়নের ভোটটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকে সেখানে নৌকা প্রতীক দিয়ে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।

chardike-ad

রাতারাতি ভোল পাল্টে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালামের নৌকায় সওয়ার হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না ক্ষমতাসীন দলেরই স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একটি বড় অংশ। এই নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী না দেয়ায় আবুল কালাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া মার্কা নিয়ে লড়াই করা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামিনা সুলতানা। আর দলের একটি বড় অংশের সমর্থন তার দিকেই।

সামিনার স্বামী রফিকুল ইসলাম মুরাদ দুই বছর আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে এই আসনটিতে নৌকা প্রতীকের বর্তমান প্রার্থী আবুল কালামকে হারিয়েছিলেন। তখন তিনি লড়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুরাদের মৃত্যুর পরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি ফাঁকা হয়।

অভিযোগ উঠেছে এবার নৌকা প্রতীক পেয়ে বেপোরোয়া হয়ে আওয়ামী লীগেরই তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকদের ওপর হামলা, মারধর করেছেন আবুল কালাম। এই ঘটনায় কালামকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান ফরহাদ জানান, গত ১৩ জানুয়ারি মুরাদ মারা গেলে পদটি শূন্য হয়।

ইউনিয়নটিতে ছয় হাজার ৯৯৭ জন পুরুষ ও ছয় হাজার ৭৯৭ জন নারী ভোটার রয়েছেন। সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা নাগাদ নয়টি কেন্দ্রে ভোট নিতে নয়জন প্রিজাইডিং ও ৩৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী।

এই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ছিলেন সাত জন প্রার্থী হন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সামিনা সুলতানা, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি কামররুল হাসান চৌধুরী, মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের মিলন, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক শওকত হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ (কলেজ সংসদ) নেতা আবুল কালাম, মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান কামরুল হাসান সায়েম, ঢাকা মহানগর উত্তর ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রিকু খান।

নিজ দলের এই প্রার্থীদের বাদ দিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালামকে দেয়া হয় নৌকা প্রতীক। পরদিন মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কালামকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

ভোল পাল্টানো নিয়ে বক্তব্য নেই আবুল কালামের

দলবদল, আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম কিছু বলতে অস্বীকার করেন। বলেন, ‘ভাই আমাকে ছেড়ে দেন, এখন এই বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

কালামের আওয়ামী লীগ বিরোধী যত কর্মকাণ্ড

কালাম ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে মুরাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

ভোটের সপ্তাহ খানেক আগে ১৬ এপ্রিল তার লোকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুরাদের ওপর বড় পাইকুড়া বাজারে প্রচারণা চলাকালে অতর্কিত হামলা হয়। সেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর, মোটর সাইকেলে আগুন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে।

পরে কালাম ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে মোহনগঞ্জ থানায় দ্রুতবিচার আইনে মামলা করেন মুরাদ। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। কালাম বিএনপির সমর্থন নিয়ে পরপর দুইবার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।

মনোনয়ন বঞ্চিতরা যা বলছেন

নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত মোহনগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি কামরুল হাসান চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমিসহ বাকি ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই স্বাধীনতার পরে শক্তি ও আওয়ামী পরিবারের লোক। উপজেলা আওয়মী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতন সাতজনকেই বলেছেন, তোমাদের সবার কাগজপত্র রেখে দিলাম এগুলো এমপি চাচির (রেবেকা মমিন) কাছে পাঠাব।’

‘তিনি তো আামদের গার্ডিয়ান। তিনি এই সাতজনের মধ্যে থেকেই মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু সভাপতি তার কথা রাখলেন না। তিনি যদি দলের ভালো চাইতেন তবে এই হীন কাজ করতে পারতেন না।’

রিকু খান বলেন, ‘গত ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যে আমরা সাতজন প্রার্থী দলীয় ফরম কিনে তৃণমূলে অংশ নেই। কিন্তু আমাদের কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপির সহসভাপতিকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় সকলেই হতবাক হয়েছি।’

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর কিছু দিন পর উপজেলা সভাপতি লতিফুর রহমান রতনের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন তোমার স্বামী মারা গেছেন তুমি বাড়িতে যাও। তোমার চিন্তা আমার ও এমপি চাচির। তার কিছুদিন পর আমি ঢাকায় এমপি ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করে মনোনয়ন চেয়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করি।’

‘আমার স্বামী দলের জন্য কিনা করেছেন। আর মাত্র ৪০ দিনেই সবকিছু ভুলে গেছেন সবাই!’

সামিয়ার অভিযোগ, আবুল কালাম বিভিন্ন গ্রামে তার সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। অনেক ভোটারদের মারধর করছেন। পেশীশক্তি ব্যবহার করছেন।

উপজেলা বিএনপির বক্তব্য

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকম শফিকুল হক বলেন, ‘কালাম আমাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তাই তাকে সহসভাপতির পদ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে আগে কখনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি।’

নাখোশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী লিয়নের বাড়ি নির্বাচনী এলাকায়। তিনি  বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল, যেহেতু মুরাদ একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন তাই তার স্ত্রী সামিনা সুলতানাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন নেতা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে মতলববাজি করে এই অপকর্ম করেছেন। দলের ক্ষতি করেছেন তারা।’

মনোনয়নের পক্ষে দুই আ.লীগ নেতার বক্তব্য

মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইকবাল বলেন, ‘এলাকায় সৎ ও জনপ্রিয় হচ্ছেন আবুল কালাম। তাকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হবে। এসব দিক ভেবে লতিফুর রহমান রতন, সাংসদ রেবেকা মমিন ও আমি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

এলাকায় তুমুল সমালোচনার মাঝে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতন ও একই ধরনের কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নটির উন্নয়নে যোগ্যতার প্রশ্নে আবুল কালাম সেরা। তাই তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’

ঢাকা টাইমসের সৌজন্যে।