‘এমনিতেই দেশের ৮০ ভাগ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এখন লোকশান দিয়ে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে অডিটের নামে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। গার্মেন্ট মালিকদের এখন ঘুষের ওপরও ভ্যাট দিতে হচ্ছে।’
বুধবার বন্ড সুবিধা-সংক্রান্ত রফতানি খাত তথা পোশাক, নিটওয়্যার, কম্পোজিট ও প্যাকেজিং খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের এই প্রাক বাজেট আলোচনা রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সম্প্রতি গার্মেন্ট মালিকরা ঠিক মতো ভ্যাট দেয় কি-না তা খতিয়ে দেখতে অডিট শুরু করেছে এনবিআর। নিয়ম অনুসারে পরিবহন খরচ, প্যাকেজিংসহ অন্যান্য ব্যয়ের ওপর ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু এখন আবার মিসেলেনিয়াস (অন্যান্য) ব্যয়ের ওপরও ভ্যাট দেয়া হচ্ছে কি-না তা দেখা হচ্ছে। এর মানে অন্যান্য খরচের মধ্যে বিভিন্ন কার্যসম্পাদনের জন্য যে ঘুষ দেয়া হয় সেটাও যুক্ত আছে। এজন্য আমাদেরকে (গার্মেন্ট মালিক) ঘুষের ওপরও ভ্যাট দিতে হচ্ছে।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশে ইনকাম ট্যাক্স নিয়ে মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে। আস্থা রয়েছে। সেচ্ছায় মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু ভ্যাটের বিষয়ে মানুষের আস্থা নেই। অনেকে তা দিতে চান না। এজন্য অডিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। দেখা গেছে, অডিটের পর অনেকে দাবি করা ভ্যাট পরিশোধ করছেন।
তিনি বলেন, রাজধানীতে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক রোগী-গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট নিচ্ছে কিন্তু তা পরিশোধ করছে না। অডিটে সেটা ধরা পড়ছে। তবে অডিটের নামে যেন কোনো হয়রানি না করা হয়, সেটাও দেখা হবে।
অনুষ্ঠানে নিট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্যাকেজিং ম্যানুফেচারাস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ), বাংলাক্রাফটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে রফতানিমুখী গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে তা কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে এ খাতের উদ্যোক্তারা।
অনুষ্ঠানে এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি লস দিয়ে ব্যবসা করছে। মাত্র ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মুনাফা করছে। কিন্তু সবাইকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এজন্য লস দিয়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা খুবই কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, বায়াররা ন্যায্যমূল্য দিচ্ছে না। এর বাইরে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে কাঁচামালের দাম। এজন্য উৎসে কর কমিয়ে তার মেয়াদ ৫ বছরের জন্য ফিক্সট করে দেয়ার দাবি করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক শিল্প কারখানার মালিক বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজার অস্থির হচ্ছে। এর বাইরে অনেকে যে দামে পণ্য রফতানি করছে, তার পুরো মুনাফা দেশে আনছেন না। এজন্য আসন্ন বাজেটে ঘোষিত মূল্যের ওপর উৎসে কর কাটা হবে। এ নিয়ে আরও আলাপ আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান।
সূত্র- জাগো নিউজ