Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবশেষে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেন

spainস্নায়ুরও বুঝি একটা সহ্য ক্ষমতা আছে। স্পেন-মরক্কো ম্যাচে স্নায়ুর এতটা পরীক্ষা নিল যে, সেটা অবিশ্বাস্য। কালিনিনগ্রাদে ক্ষণেক্ষণে ম্যাচের রঙ বদলেছে। ম্যাচের পাল্লাও দুলেছে দু’দিকে। কখনও মরক্কো, তো আবার কখনও স্পেনের দিকে। তবে, পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, ম্যাচে মরক্কোই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। না, বল পজেশনে নয়। গোল দেয়ার দিক থেকে। কারণ, দু’বারই গোল দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল মরক্কো এবং দু’বারই গোল পরিশোধ করে সমতা ফিরিয়েছে স্পেন।

শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে মরক্কোর সঙ্গে ড্র করতে হলো স্পেনকে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে স্পেনকে গোল করে বাঁচিয়েছেন আসপাস। ২-২ গোলে ড্র করার কারণেই ‘বি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে স্পেন।

chardike-ad

অথচ ম্যাচের দখল ছিল স্পেনের কাছে ৭৫ ভাগ আর মরক্কোর ২৫ ভাগ। গোলে সমান সমান। পুরো ম্যাচে একতরফা খেলেও জিততে পারলো না স্প্যানিশরা। পোস্ট লক্ষ্যে ১৭টি শট নিয়েছিল স্পেন। অন টার্গেট ৫টি। বিপরীতে মরক্কো সব মিলিয়ে শট নিয়েছে ৫টি। অন টার্গেটে ৩টি। ২টিই গোল। স্পেন পাস দিয়েছে সর্বমোট ৭৪০টি। মরক্কো দিয়েছে মাত্র ২৪৩টি।

সবচেয়ে বেশি নাটকের জন্ম হয়েছে শেষ মুহূর্তে স্পেনের গোলের সময়। ইয়াগো আসপাস গোল দিলেও সেটি বাতিল করে দেয়ার জন্য ফ্ল্যাগ তোলেন লাইন্সম্যান। কিন্তু গোল যেহেতু হয়েছে, সুতরাং, স্পেন ফুটবলাররা রিভিউর আবেদন জানায়। এ নিয়ে রেফারির সঙ্গে কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত রেফারি রেফারেল নিলেন। ভিডিও দেখলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন আসপাস অফসাইড ছিলেন না এবং ওটা গোল।

ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) না থাকলে নিশ্চিত, অফসাইডের অজুহাতে গোল বাতিল হতো এবং স্পেনের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেতো। কারণ, ওই সময় মরক্কো জিতে যেতো ২-১ গোলে এবং গ্রুপের অন্য ম্যাচে পর্তুগালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ফেলেছে ইরান। সুতরাং, ইরানই উঠে যেতো দ্বিতীয় রাউন্ডে। কিন্তু; শেষ পর্যন্ত কপাল পুড়লো উরানের। উল্টো গোল ব্যবধান সমান হলেও, মোট গোল সংখ্যায় ১টি বেশি থাকার কারণে স্পেনই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।

প্রথম ম্যাচেই পর্তুগালের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপের শুরুতে নিজেদের পথচলাটা কঠিন করে ফেলে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন। যদিও পরের ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে দিয়েগো কস্তার একমাত্র গোলে নিজেদের বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তারা। মরক্কোকে হারাতে পারলে কিংবা ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যাবে স্পেনের।

এমন সমীকরণে কালিনিনগ্রাদে শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকে স্পেন। আক্রমণের পর আক্রমণ। মুহুর্মুহু আক্রমণে ব্যস্ত রাখে মরক্কোর রক্ষণভাগ। কিন্তু ১৪ মিনিটেই ধারার বিপরীতে গোল খেয়ে বসে স্পেন। যদিও ১৯ মিনিটে সেই গোল শোধ করে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ৮১ মিনিটে গোল করে আবারও মরক্কো এগিয়ে যায়। ইনজুরি সময়ে (৯০ + ১ মিনিটে) সমতায় ফেরে স্পেন।

খেলার ১৪ মিনিটেই ডিফেন্ডারদের অমার্জনীয় ভুলে গোল খেয়ে বসে স্পেন। ম্যাচের শুরুতেই বলতে গেলে ব্যাকফুটে। অথচ, তখনও পর্যন্ত ৭৫ ভাগ বল পজিশন ছিল স্পেনের দখলে। মাঝ মাঠে সার্জিও রামোসের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন খালিদ বোতাইব। সামনে আর কেউ নেই।

বোতাইবের গতির সঙ্গেও যেন কেউ পেরে ওঠার জো নেই। উসাইন বোল্টের চেয়েও বেশি গতিময় হয়ে উঠেছেন তিনি। সামনে শুধু গোলরক্ষক ডি গিয়া। পেছন পেছন জেরার্ড পিকে দৌড়ে এলেন। কিন্তু পৌঁছাতে পারলেন না। বোতাইব নিলেন বুদ্ধিদীপ্ত শট। ডি গিয়ার দুই পায়ের ফাঁক গলে সোজা বল জড়িয়ে গেলো স্পেনের জালে।

গোল হজম করার পর সেটা শোধ করতে বেশি সময় নিল না স্পেন। ১৯তম মিনিটে টিপিক্যাল স্প্যানিশ আক্রমণ। ইসকো আর ইনিয়েস্তার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কিন্তু ডি বক্সের মধ্যে একেবারে পোস্টের সামনে মরক্কোর পার্ক করা বাস ফাঁকি দিয়ে গোলের বলটি অসাধারণভাবে বানিয়ে দিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।

গোলের বাম পাশ থেকে হালকা ব্যাকপাস ছিল ইনিয়েস্তার। পোস্টের সামনে পেয়ে যান ইসকো। বলটি থামিয়ে ডান পায়ের দারুণ এক প্লেসিং শর্ট। সঙ্গে সঙ্গেই জড়িয়ে গেল জালে। ১-১ সমতায় ফিরলো স্পেন।

প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে, ইনজুরি সময়ের ২য় মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন দিয়েগো কস্তা। কিন্তু পোস্টের সামনে তিনি শুধু বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হলেন। না হয়, প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারতো স্প্যানিশরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই এক তরফা খেলতে শুরু করে স্পেন। মরক্কোর গোলমুখে একের পর এক আক্রমণ। পুরো মরক্কো শিবিরেই যেন আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছিল তারা। তবে, মরক্কানরাও কম যাচ্ছিল না। একটা বল ধরতে পারলেই সেটাকে নিয়ে উঠে আসছে কাউন্টার অ্যাটাকে। তেমনই এক কাউন্টারে গোল আদায় করে নেয় মরক্কো।

৮০ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে এসে হাকিম জিয়েচ একেবারে বল নিয়ে স্পেনের বক্সে চলে আসেন এবং অসাধারণ একটি শট নেন। কর্নারের বিনিময়ে সেটি ঠেকান জেরার্ড পিকে। কর্নার কিক নেন পরিবর্তিত খেলোয়াড় ফ্যাকেল ফাজর। তার দারুণ শটটি চলে আসে বক্সের মাঝে। পরিবর্তিত খেলোয়াড় ইউসুফ এন-নেসির সার্জিও রামোসের ওপর লাফিয়ে উঠে দেখার মতো এক হেডে বলটি জড়িয়ে দেন স্পেনের জালে।

মজার বিষয় হলো প্রথম গোলদাতা খালিদ বোতাইবের পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন এন-নেসির। একই পজিশনের দু’জনই গোল করলেন। পিছিয়ে পড়ে পরাজয়ের শঙ্কা যখন স্পেন শিবিরে ঝেঁকে বসে তখন দিয়েগো কস্তার পরিবর্তে ৭৪ মিনিটে মাঠে নামা ইয়াগো আসপাসই হলেন স্পেনের ত্রাতা।

ইনজুরি সময়ে (৯০ + ১ মিনিটে) ডান প্রান্ত থেকে অসাধারণ একটি ক্রস করেন দানি কার্ভাহাল। তার শটটি নেয়ার সময়ই লাইন্সম্যানের মনে হয়েছিল অফসাইড। এ সময় বক্সের মধ্যে গিয়ে ডান পায়ে পেছন দিকে বলটা ঠেলে দেন ‍শুধু আসপাস। সেটিই জড়িয়ে যায় মরক্কোর জালে। যদিও শেষ পর্যন্ত ভিএআরের মাধ্যমে গোলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।