Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশি ছাত্রের বিশ্বজয়

১৮ ডিসেম্বর ২০১৩, সিউল:

১৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মক্কা নগরীর হারাম শরিফে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহের ছেলে নাজমুস সাকিব। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৭০টি দেশের প্রতিযোগী। এর আগেও অনেক পুরস্কার ঝুলিতে পুরেছে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর তাহ্‌ফিজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ্ মাদ্রাসার এ ছাত্র।

chardike-ad

2_31734ময়মনসিংহ শহরের একটি ছোট পরিসরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন বাবা। চার বছরের ছোট্ট ছেলেটি সেখানে পড়তে রাজি নয়। বাবার কাছে বলেছিল, ‘বাবা, আমারে বড় মাদ্রাসায় ভর্তি করাও।’ বাধ্য হয়ে ছেলের মাদ্রাসা বদল করলেন বাবা, ভর্তি করিয়ে দিলেন ময়মনসিংহ শহরের আমলাপাড়া এলাকার আনোয়ারা হাফেজিয়া মাদ্রাসায়। শিশুমনের এ চাওয়াতেই হয়তো লুকিয়ে ছিল বড় পরিসরে নিজেকে তুলে ধরার বাসনা। গল্পের ছোট্ট ছেলেটিই আজকের সাকিব। নিজেকে সে তুলে ধরেছে বিশ্বের দরকারে। হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় হয়েছে বিশ্বসেরা। দেশ-মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে একে একে বিজয়ের তিলক জয় করে চলেছে সে।

১৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরীর হারাম শরিফে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় সাকিব প্রথম হয়। বর্ণাঢ্য এ প্রতিযোগিতায় ৭০টি দেশ অংশ নেয়। ২ ডিসেম্বর সেরাদের সেরার পুরস্কার হিসেবে সাকিবের হাতে ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল তুলে দেন সৌদি ধর্মমন্ত্রী, মক্কা শরিফের ইমামসহ বিশ্বের ধর্মীয় নেতারা। সুখবর হলো, এবারের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীও বাংলাদেশী ছাত্র। তারা হলো হাফেজ সাইদ আহম্মেদ ও হাবিব উল্লাহ।

গত দুই বছরে খুদে আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বসেরা হয়েছে সাকিব। নিজের সাফল্য দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে সম্মানের শিখরে। ২০১২ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় এশিয়ার ২৭টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে সাকিব। ২০১৩-তে এনটিভি-পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায়ও সাকিব প্রথম স্থান অর্জন করে প্রায় ২০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে। এ বছরই দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করে। আর সেই গৌরব এনে দেয় হাফেজ মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব। গত ১৬ থেকে ২২ রমজান এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার হিসেবে সাকিব পায় ৪৭ হাজার দিনার।

সাকিবের পুরো নাম হাফেজ মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব। বয়স ১৩। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার জোড়বাড়িয়া ইউনিয়নের ইচাইল গ্রামে। বর্তমানে পড়াশোনা করছে ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার তাহ্ফিজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ্ মাদ্রাসায়।

শিশু সাকিবের ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে তার বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদ্রাসায় ভর্তির পরই নিজের মেধার পরিচয় দেয় সাকিব। প্রথম বছরই নুরানি ও নাজেরা শেষ করে। মাত্র দুই বছরেই হিফ্‌জের প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরের বছর বেফাক বোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হয় সাকিব।’

২০১০ সালে সাকিব ভর্তি হয় যাত্রাবাড়ীর তাহ্ফিজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ্ মাদ্রাসায়। ভর্তির পর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলহাজ হাফেজ মো. নাজমুল হাসানের কাছে বিশেষ তালিম নিতে থাকে।

পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি কেমন- এ প্রশ্নে মুচকি হাসে সাকিব। বলে, ‘খুউব ভালো’। সাকিবের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কোনো প্রতিযোগিতায় গিয়ে সাকিব খুব টেনশনে পড়ে যেত। কিন্তু সে আবার আমাকেই সান্ত্বনা দিয়ে বলত, ‘আব্বা তুমি চিন্তা কইরো না। ঠিক বিচার অইলে আমিই ফার্স্ট অইমু’।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ।”