Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রামেক হাসপাতালে লাশ জিম্মি করে ব্যবসা

ambulanceরাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পার্কিং করে রাখা থাকে ১০-১৫টি মাইক্রোবাস। যেগুলো অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ভাড়ায় চলে। এই গাড়িগুলোর চালক এবং তাদের সহকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লাশ জিম্মি করে তারা ব্যবসা করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাইক্রোবাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া লাশ অথবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে যাওয়া রোগী ধরার আশায়। বিশেষ করে কোনো রোগী হাসপাতালে মারা গেলে মাইক্রোবাস চালক বা তার সহকারীরা ছুটে আসে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের কাছে। যে চালক বা তার সহকারী প্রথম কোনো স্বজনের সঙ্গে কথা বলবে, ওই লাশ আর অন্য কোনো মাইক্রোবাসে নিয়ে যাওয়া যায় না। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা হলো মাইক্রোবাস মালিকরা।

chardike-ad

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শুক্রবার রামেক হাসপাতালে রাত ১২টার দিকে মারা যায় দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাদহ গ্রামের মৌসুমি বেগম। রাজশাহী শহর থেকে ওই গ্রামের দূরত্ব বড়জোর ২৫ কিলোমিটার। সেই হিসাবে একটি ভালো মানের মাইক্রোবাসের ভাড়া হয় সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। কিন্তু হাসপাতালের সামনের চালকরা দাবি করে সাত হাজার টাকা। শেষে সাড়ে চার হাজার টাকায় রাজি হয়। এর পরে একটি লক্কড়ঝক্কড় মার্কা মাইক্রোবাসে করে লাশটি নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাদহ গ্রামে।

দরিদ্র মৌসুমির স্বজন শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাইরের গাড়িতে করে লাশ বাড়িতে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু মাইক্রোবাসের সিন্ডিকেটের সদস্যরা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের গাড়িতেই লাশ নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এত বেশি টাকা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তারা লাশ নিয়েও যে বাণিজ্য করে, সেটি না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতাম না।’

স্থানীয়রা জানায়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আনোয়ার হোসেন নামের এক রোগী মারা যান গত বৃহস্পতিবার। তাঁর লাশ কুষ্টিয়া নিতে স্বজনদের গুনতে হয় ১২ হাজার টাকা। অথচ বাইরের একটি ভালো মানের মাইক্রোবাসের ভাড়া হয় সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে অন্তত আট হাজার টাকা বেশি আদায় করে রামেক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাসের সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

আনোয়ার হোসেনের স্বজন মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেছিল। শেষে ১২ হাজার টাকায় রাজি হয় তারা। এরপর লাশ নিয়ে বাসায় ফিরতে পেরেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালের পুলিশ সদস্যরাও ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রয়েছেন। না হলে তাঁদের সামনেই দর-কষাকষি করে মাইক্রোবাসের চালক বা তাদের লোকজন। কিন্তু পুলিশ কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায় না।’

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালকেন্দ্রিক প্রায় ৫০টি লক্কড়ঝক্কড় মার্কা মাইক্রোবাস আছে। যেগুলোর বেশির ভাগের মালিক স্থানীয় রাব্বুল ও জনি। এই দুজনের প্রভাবেই মাইক্রোবাসচালক ও তাদের লোকজন হাসপাতালের লাশ পরিবহনের নামে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। তাদের দাপটের কারণে বাইরের কোনো মাইক্রোবাসে করে লাশ পরিবহন করা যায় না। লাশ পরিবহন করতে বাইরের মাইক্রোবাস হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

তবে এ বিষয়ে মাইক্রোবাস মালিক রাব্বুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেট নয়। আসলে লাশ তো সবাই পরিবহন করতে চায় না। তাই চালকদেরও বেশি টাকা দিতে হয়। এ কারণে একটু বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়। তবে আমরা অনেক গরিব মানুষের ক্ষেত্রে ভাড়া কমও আদায় করি।’

জানতে চাইলে হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছু করার নেই। লাশ পরিবহনের জন্য স্বজনদের সঙ্গে লেনদের হয় বাইরে। তার পরেও আমরা চেষ্টা করি যেন লাশ নিয়ে কেউ বাণিজ্য করতে না পারে। কোনো অভিযোগ পেলে মাইক্রোবাস চালকদের ডেকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিই।’

সূত্র- কালের কণ্ঠ