Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘ওভারটাইম তো আর শখ করে করি না’

nmalaysia-bangladeshi‘দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত সময়ের কাজকেই ওভারটাইম বলা হয়ে থাকে। তবে প্রবাসের ওভারটাইম একটু অন্যরকম কষ্টের। কি করতে হয় জানেন? অনেকেরই অজানা। রাস্তায় কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাড়ি বাড়ি যেতে হয়। চারতলা থেকে খাট ফ্রিজ নিচতলাতে নামাতে হয়। এরই নাম ওভারটাইম।’

আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। বলেন, প্রবাস জীবন মানেই বুকের মাঝে চাপা থাকা কষ্টগুলোকে মুখের কৃত্রিম হাসি দিয়ে লুকিয়ে রাখা। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কষ্ট জমা হতে থাকে আমাদের হৃদমাঝারে। আবার ছোট একটা সংবাদ অনায়াসে লাঘব করে দিতে পারে সব কষ্টের যন্ত্রণাকে।

chardike-ad

অনেক বাংলাদেশি শ্রমিককে কয়েক বছর আগেও মালয়েশিয়ায় অলিতে-গলিতে পেপসি ক্যান টোকাতে দেখা যেত। স্বল্প বেতনে সংসারের চাপ কুলাতে না পেরে অনেক প্রবাসী বেছে নিত অন্যায়ের পথ। কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট।

অনেক প্রবাসীকে ওভারটাইম করে নিজের খরচটা জোগাড় করতে হয়। যেন বেতনে হাত লাগাতে না হয়। প্রবাসীদের জীবন-যাপন অতি সাধারণ। ওদের চলতে এত টাকা লাগে না।

মূলত বিদেশ যাওয়ার সময়ই জমিটুকুই বিক্রি করে গেছেন। টাকা না পাঠালে অনেকেরই চুলো জ্বলে না। আবার অনেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে বিদেশে গেছেন। আসল টাকাটা দিতে না পারলেও সুদের টাকাটা অন্তত মাসে মাসে দিতে হয়। চার পাঁচ বছর কেটে যায় বিনিয়োগের টাকাটা তুলতে।

আমরা জোরসে বলে থাকি, আমার ভাই বিদেশে। আমার বাবা, মামা বিদেশে থাকেন। স্ত্রী-স্বামীর কাছে আবদার সংসার চালাতে টাকা পাঠাও। সন্তান বাবাকে জানায় স্কুলের জন্য টাকা পাঠাও। একটি রঙিন টিভি পাঠাও। মোবাইল সেট আপডেটটা পাঠাও। কম্পিউটার ছাড়া চলছেই না। নানা আবদার শুনতে হয় একজন প্রবাসীকে।

আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? তারা কীভাবে টাকা অর্জন করছে। আমি যখন টাকা চাচ্ছি তখন প্রবাসী স্বজনের কাছে টাকা আছে কি-না? কখনও কি ভেবেছি প্রবাসী ব্যক্তিটি কী কাজ করছে।

হাতেগোনা কিছু প্রবাসীর ভাগ্যে আরামদায়ক কাজ মিললেও অনেকেই কনস্ট্রাকশনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। কেউ মরুভূমিতে উট চরাচ্ছে। কেউ অতল সাগরের নিচে রেললাইনের কাজ করছে। কেউ আবার আকাশচুম্বী দালানে কন্সট্রাকশনের কাজে ব্যস্ত। অথচ ফোন না ধরলেই আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি।

আমরা কি ভেবে দেখি, আমাদের অসুস্থতায় স্বজনরা সেবায় এগিয়ে আসেন। অথচ আমাদের ওই প্রবাসী মানুষটা অসুস্থতায় কাতরাচ্ছে একা ঘরের কোণে। তার সহকর্মীও থাকতে পারছে না কাজের চাপে। তাদের শ্রমের মূল্য আমাদেরকে দিতে হবে।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত এমনই তিনজন রেমিটেন্স যোদ্ধা সঙ্গে কথা হলো এ প্রতিবেদকের। সুনামগঞ্জের ছাতকের ওয়ারিছ আলীর ছেলে যুবরাজ মিয়া ২০১৬ সালের জুন মাসে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলেজে লেখাপড়া করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় পরিবারের অভাব অনটনে লেখাপড়া আর হলো না।

পড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারকে। বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালে স্টুডেন্ট ভিসা কেন্সেল করে রি-হিয়ারিং-এর আওতায় বৈধতা নিয়ে হয়ে যান শ্রমিক। তবে এখনও ভিসা পাননি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যুবরাজ জানান, বড় আশা ছিল লেখাপড়া করব। কিন্তু পড়ার খরচ মেটানো পরিবারের সম্ভব নয় বলে কাজ করছি। দীর্ঘশ্বাস টেনে যুবরাজ বললেন, ভালোই চলছে। মাসের শেষে বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচের টাকা রেখে বাড়িতে বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেন।

নওগাঁর রানিনগর থানার তবিবর মল্লিকের ছেলে মো. রায়হান মল্লিক (২৪) ২০১৩ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ায়। এক বছর পর রায়হান হয়ে পড়েন অবৈধ। স্টুডেন্ট ভিসা আর লাগাতে পারেননি। ৩ বছর পর রি-হিয়ারিংএর আওতায় বৈধতা পান।

বগুড়ার আদমদিঘী থানার লোকমান প্রামানিকের ছেলে মো. মাহবুব প্রামাণিক (২২) ২০১৬ সালে প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় আসেন। এক বছর যেতে না যেতেই হয়ে যান অবৈধ। ২০১৭ সালে রি-হিয়ালিং-এর আওতায় বৈধতা পান। সুনামগঞ্জের যুবরাজ, নওগাঁর মো. রায়হান মল্লিক, বগুড়ার মো. মাহবুব প্রামানিক ফয়েজ ক্লিনিং সার্ভিস কোম্পানির মাধ্যমে বৈধতা পেয়েছেন।

কুয়ালালামপুরের অভিজাত হোটেল পেসিফিক রিজেন্সিতে ১৪০০ রিঙ্গিত বেতনে ক্লিনিং-এর কাজ করছেন তারা। তারা বলেন, এখানে কাজ করছি বিভিন্ন দেশের কাস্টমারদের সঙ্গে কথা হয়। বাংলাদেশকে তারা জানতে চায়। এক পর্যায় বিদেশিরা বলে বর্তমানে বাংলাদেশ এখন ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ। তাদের প্রশ্ন ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধাদের নিয়ে কি করছে আমাদের সরকার

লেখক- মো. মুখলেছুর রহমান, সৌজন্যে- জাগো নিউজ