Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

saudi-selimকলেজ ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ, ঋণের বোঝা আর পরিবারের দারিদ্র্যতা ঘোচানোর স্বপ্ন নিয়ে সুদে টাকা নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের কণ্ঠশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সেলিম।

ঋণের টাকা পরিশোদের আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় সৌদি আরবের দাম্মামে প্রাণ ঝরল তার। সেই পথের ধুলোয় তার সুখ-স্বপ্নের অকাল সমাধি হলো। এ দুঃসংবাদে সেলিমের পরিবার ও এলাকায় চলছে শোকের মাতম। অসহায় স্ত্রী ও সন্তানরা সেলিমের লাশ দেশে আনতে এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

chardike-ad

মৃত্যুর দিন দুটি গান গেয়ে ইমুতে স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পাঠিয়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় দাম্মামে সেলিমের জীবন ঝরে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠেছে তার কণ্ঠে গাওয়া শেষ গানগুলো।

শুক্রবার বিকালে তার গ্রামের বাড়ি পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন স্থানে স্থানে গোলবেঁধে বসে সেলিমের সেই গানগুলো শুনছেন, আর চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট গ্রামের মৃত শেখ মাহমুদ মিয়ার ছোট ছেলে কণ্ঠশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সেলিম। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বিয়ে করেন। তার দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। বর্তমানে তার ছেলে বিজয় কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষে ও মেয়ে নওরীন স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

এলাকায় থেকে গান গেয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে এক সময় ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন সেলিম। আর সেই ঋণের বোঝা আর পরিবারের দারিদ্র্যতা ঘুচাতে দেড় বছর আগে স্বজনরা মিলে ৬ লাখ টাকা সুদের ওপর ঋণ নিয়ে তাকে সৌদি আরব পাঠান।

সেখানে রিয়াদের সাউন্ড লাইফ নামে বোতলজাত খাবার পানি সরবরাহকারী কোম্পানির দাম্মাম শহরের সেলসম্যান হিসেবে কাজে যোগ দেন। মাঝেমধ্যে সেখানেও বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত তার। ইতিমধ্যে বাড়ির খরচ পাঠানোর সঙ্গে কিছু ঋণের টাকাও পরিশোধ করেছিলেন সেলিম। কিন্তু সেই সুখের গল্পটা শুরু হওয়ার আগেই স্বপ্নবাজ সেলিমের প্রাণ দাম্মামের পথের ধুলোয় ঝরে পড়ল।

২৬ মার্চ মঙ্গলবার সৌদি আরবের সময় ৬টা ২০ মিনিটের দিকে দায়িত্ব পালন শেষে কোম্পানির গাড়িতে বাসায় ফেরার পথে তাকে বহনকারী গাড়িটির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কণ্ঠশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সেলিম।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, এখনও চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন সেলিমের স্ত্রী নাজমা আক্তার বিউটি ও তার দুই সন্তান। এ সময় বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী নাজমা। ছেলে বিজয় ও মেয়ে নওরীনও কাঁদতে কাঁদতে গভীর আলিঙ্গনে জরিয়ে ধরছিল মমতাময়ী মায়ের আঁচল।

একপর্যায়ে চোখের জল মুছে ফুফাতে ফুফাতে ছোট নওরীন বলছিল, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। ছেলে বিজয় বলছিল, বাবাকে আমি আর একটি বার দেখতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার বাবার লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন, আমাদের দিকে নজর দেন।

আর কী হবে, আমি এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে কী করব, কেমনে তাদের লেখাপড়া করাব- এমন সব আহাজারি করে স্বামী সেলিমের লাশ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছিলেন নাজমা। তাদের আহাজারি ও আকুতিতে তখন ভারি হয়ে ওঠেছিল এলাকার বাতাস।

সৌজন্যে- যুগান্তর