ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার রাতে ওই শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে হলের ডাইনিং রুমে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ফরিদ হাসান। তিনি উর্দু বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। গুরুতর আহত ফরিদ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। তার জখম হওয়া স্থানে ৩২টি সেলাই লেগেছে।
হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, সাবেক নেতা মিজানুর রহমান পিকুল ও হল সংসদের জিএস জুলিয়াস জিসারের নেতৃত্বে তাকে মারধর করা হয়। ফরিদ হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টায় ছাত্রলীগের হল কমিটির সভা ছিল। সভা শেষে ফরিদ হাসানকে মারধর করে হল ছাড়া করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘আমরা হলে যখন মিটিং করতে ছিলাম তখন বাইরে হট্টগোলের শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখি ফরিদকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারধর করছে। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি তাকে মারধরের আগে দেখিওনি। সে ছিল হলের বাইরে। সপ্তাহখানেক আগে মাদকসংশ্লিষ্টতার কারণে তার রুম হল প্রশাসন সিলগালা করেছে।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান বলেন, ‘আমি রাত ১১টার দিকে রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন আমাকে ডেকে মেসের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, সাবেক নেতা মিজানুর রহমান পিকুল ও হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজারসহ হল কমিটির প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপস্থিত নেতারা ‘তোর সাহস তো কম নয়, এখনও হলে থাকিস’ এই বলে আমাকে ব্যাপক মারধর শুরু করে। সেখান থেকে মারতে মারতে হল গেটে নিয়ে বেরিয়ে যেতে বলে। এ সময় আমাকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সাহস করেনি। পরে নিজে নিজেই হাসপাতালে গিয়েছি।’
ফরিদ জানান, হল সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা তাকে শাসিয়ে ও হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন বলে জানান।
মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার বলেন, আমরা হল ছাত্র সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো মাদক ব্যবসায়ী ও শিবিরকে হলে থাকতে দেয়া হবে না। সে হিসেবে ফরিদের বিরুদ্ধে মাদকসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত। আমরা তাকে ভদ্রভাবে হল ছেড়ে দিতে বলেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা হল শাখা ছাত্রলীগের সহযোগিতা নিয়েছিলাম। কারণ তারা হলে ক্রিয়াশীল। তিনি বলেন, আমরা তাকে মারধর করিনি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করেছে বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে সকালে ফরিদকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে দেখতে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, হলে অছাত্র যারা থাকে তারাই নিয়মিত ছাত্রদের নির্যাতন করে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য আমাদের যা করা লাগে তাই করব।
এ বিষয়ে জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুব জোয়ার্দারকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি হলের বিষয়। হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমরা হল প্রশাসনকে সহযোগিতা করব।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ