সারাদিন কাঠফাটা রোদ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি যাই হোক দায়িত্বে কোন অবসর নেই ট্রাফিক পুলিশদের। তারা বিশ্রামে গেলে যে নগরবাসীর বাড়ি ফেরাই দুঃসহ হয়ে উঠবে! রমজান মাসে দায়িত্বের চাপ যেন আরো বেড়ে যায়। বিপণী বিতান, হাট-বাজারে মানুষের আগমনকে কেন্দ্র করে সড়কে বেড়ে যায় গাড়ির চাপ।
সেই চাপ সামলে সড়কের শৃংখলা ঠিক রাখতে সব সময় তৎপর থাকতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের। কখনো এমন হয় ইফতারির সময় হয়ে গেছে, কিন্তু দায়িত্ব থেকে সড়তে পারছেন না তারা, তখন হয়তো এক হাতে সিগনাল দিতে দিতে অন্য হাতে করতে হয় ইফতার।
রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে দেখা যায়, ইফতারের আগ মুহূর্তে হাত লম্বা করে জেব্রা ক্রসিংয়ে দাড়িয়ে আছেন সার্জেন্ট নূরুজ্জামান। সাথে রাস্তার আরো তিনটি মোড়ে আছে পাঁচ সাত জনের একটি টিম। পাশে বসুন্ধরা শপিংমল থাকায় পান্থপথ মোড়টিতে অন্যান্য মোড়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ একটু বেশি।
বিকেল গড়িয়ে প্রায় ছয়টা। রাস্তায় মানুষ আর গাড়ির জট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। কিছু সময় পরেই ইফতার। তাই রাস্তায় বের হওয়া সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া। ব্যস্ততার মধ্যে রোজায় শরীরে ক্লান্তি ভর করলেও নেই জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ। সার্জেন্ট নূরুজামান জানান, তার বাসা নারায়নগঞ্জ। বাসায় মা, বাবা স্ত্রী ও পাঁচ বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। একান্ত ইচ্ছা থাকলে ও পরিবারের সাথে ইফতার করাটা হয়ে ওঠেনা।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই ইফতারি প্রস্তুতি শুরু হয় ট্রাফিক বক্সে। নুরুজ্জামান জানান, পানি, কলা, খেজুর, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি এগুলোই প্রায় নিত্যদিনের আয়োজন তাদের। মাগরিবের আজান দিতেই রাস্তার পাশে পুলিশ বক্সে ইফতারের প্যাকেট হাতে মিলিত হন সবাই। কেউ বসেন পুলিশ বক্সে আবার কেউবা জেব্রা ক্রসিংয়ে দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে করতেই সাড়েন ইফতার।
সবাই যখন বাড়িতে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ইফতারে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তখন কর্তব্যের খাতিরে ইফতার করেন নগরীর ব্যস্ত রাস্তায়। তাদের তৎপরতায় নিরাপদে মানুষ বাড়ি ফিরবে এই তৃপ্তিটুকুই যেন ভুলিয়ে দেয় পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকার কষ্টগুলো।