Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাম্বা নৃত্যে বিশ্বকাপের অপেক্ষায় ব্রাজিল

সিউল, ৯ এপ্রিল ২০১৪:

আলোকোজ্জ্বল ও খুশি কিংবা লেনন ও ম্যাককার্টনি’র মত ফুটবল ও ব্রাজিল একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যারা একে অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। এদের মত দীর্ঘ ৬৪ বছর পর ব্রাজিল বিশ্বকাপও আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হতে বাধ্য।

chardike-ad

চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে যেমন নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলও ফিরেছে তার তীর্থভূমিতে। যে দেশটি ফুটবলের ক্ষেত্রে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বিশেষ কিছু।

480px-WC-2014-Brasil.svg৬৪টি ম্যাচকে ঘিরে সাম্বার নৃত্যে উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিতব্য চার সপ্তাহের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের সফলতার ওপর নির্ভর করছে ব্রাজিল ও ফুটবলের বিজয়ী হবার বিষয়টি। যেখানে ফুটবলের নতুন সৌন্দর্য্য নিয়ে আবির্ভূত হবে বিশ্বখ্যাত মহাতারকারা কিংবা নবাগত মেধাবী ফুটবলাররা।

তবে এটি ঠিক যে, কোন কারণে বিশ্বকাপের ২০তম এই আসরটি যদি ব্যহত হয়, যার কিছু ক্ষুদ্র নমুনা ইতোমধ্যে দেখা গেছে, তাহলে ল্যাটিন আমেরিকার সর্ববৃহত দেশটি, এর খেলাধুলা এবং সর্বোপরি দেশটির আনুমানিক ২০ কোটি মানুষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্রাজিল খুব বেশী সময় নষ্ট করেছে। এ জন্য তারা ব্যয় করেছে প্রায় সাতটি বছর। অবকাঠামো নির্মাণে বেঁধে দেয়া সময়সূচি বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রতিশ্র“ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও যথাযথভাবে হয়নি এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রাজিলে আসা ফুটবল অনুরাগীদের সুবিধার্থে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে সেটি পূর্ণ করার সুযোগও আর নেই।

এই বিশ্বকাপকে উপলক্ষে করে ১২টি স্টেডিয়ামের নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকার সাড়ে তিনশ’ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ব্রাজিলের নাগরিকরা। এর প্রতিফলন তারা ঘটিয়েছে বছর খানেক আগে গত জুনে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন কাপ টুর্নামেন্ট চলাকালে। এ সময় শত শত ব্রাজিলীয় রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে ওই আন্দোলন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে সরকার। অথচ নির্মিত হচ্ছে না নতুন হাসপাতাল কিংবা স্কুলসহ মানুষের প্রয়োজনীয় স্থাপনাসমূহ।

আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের টিয়ার সেল নিক্ষেপ, কিংবা কর্মীদের ধর্মঘট, বিশ্বকাপের ভেন্যু নির্মানের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যুবরণ, প্রস্তুতি কাজের ধীরগতিসহ বিভিন্ন ঘটনা ব্রাজিলের যোগ্যতার ভাল বিজ্ঞাপন হতে পারে না। যদিও রাশিয়া, ভারত ও চীনকে নিয়ে ব্রাজিল ‘বিআরআইসি’ গঠন করেছে, যারা নিজেদেরকে তথাকথিত আগামীর অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজ হিসেবে দাবি করছে।

বিশ্বকাপ চলাকালে যদি আগের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে, যদি অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয় এবং সন্ত্রাস কবলিত শহরগুলোতে যদি সফরকারী পর্যটকরা খারাপ পরিস্থিতির মুখে পড়েন তাহলে পরবর্তীতে রিওডি জেনিরোতে অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলবে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠবে ২০১৬ অলিম্পিক আয়োজন উৎসব মুখর হবে কিনা। যদি প্রত্যাশার চেয়েও এটি বেশী ঘটে তাহলে সর্ববৃহৎ মেগা টুর্নামেন্টটির আয়োজনেও বিঘœ ঘটবে। কারণ দু’টি ইভেন্টই কাছাকাছি সময়ের মধ্যে রয়েছে।

তাই বিশ্বকাপের মত মেগা টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার অর্থ আয়ের স্বপ্ন দেখা ব্রাজিল এবং ফিফাকে অবশ্যই এই ফুটবলের সফলতা আনতে হবে। খেলোয়াড়দেরকে সেখানকার কিছু কিছু শহরের অতিমাত্রায় আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খেতে হবে। সেই সঙ্গে ভ্রমণ করতে হবে হাজার হাজার কিলোমিটার।

টুর্নামেন্টে ৩২টি দল অংশগ্রহণ করলেও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন এবং জার্মানির মত মাত্র কয়েকটি দল শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা করছে। তবে লড়াকু দল রয়েছে বেশ কটি। উরুগুয়ে, ইতালী, কলম্বিয়া, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ফ্রান্স, হল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মত কিছু ভাল দল রয়েছে যারা ফেবারিট দলগুলোকে আপসেটের তিক্ত স্বাদ পাইয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে গ্র“প পর্বের খেলার পর পরই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে অর্ধেক দল। তাই এই সময়টিতে দলগুলো প্রাণপনে লড়াই করবে নক-আউট পর্বে ওঠার জন্য। যে কারণে খেলাগুলো যথেষ্ট উপভোগ্য হবে। গ্র“প পর্বের পর দুর্বলতম দলগুলোকে ঘরে ফিরতে হবে হয়তো শূণ্য হাতেই।

তবে এটিও দেখার বিষয় থাকবে সুপার পাওয়ার দলগুলো তাদের সামর্থ্যরে প্রতিফলন কতটুকু ঘটাতে পারছে। উদাহারণ হিসেবে আসতে পারে চারবারের বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পাওয়া আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসির নাম। দেখা হবে তাকে নিয়ে সৃষ্ট প্রত্যাশার প্রতিফলন মাঠে তিনি ঘটাতে পারছেন কিনা। ১৫ জুন মেসির দলটি বিশ্ব আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে টুর্নামেন্টের নবাগত দল বসনিয়া হার্জোগোবিনার। ম্যাচে মেসির অবশ্যই উচিৎ হবে দলকে জয়ী করানো। যেমনটি তিনবার করেছেন বিশ্বসেরা তারকা পেলে এবং ১৯৮৬ সালে করেছেন ম্যারাডোনা। যারা বিশ্ব আসরে দলকে জিতিয়ে নিয়ে এসে নিজেদের কিংবদন্তীর আসরে বসিয়েছেন।

২৩ জুন ‘বি’ গ্র“পের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন যদি সাবলীলভাবে গোল করতে না পারে তাহলে সেটি হবে বিষ্ময়ের। ইতোমধ্যে ব্রাজিলে জন্ম নেয়া উদীয়মান তরকা দিয়াগো ডি কস্তাকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দলে ভিড়িয়ে সামর্থ্য বাড়িয়ে নিয়েছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বস ভিসেন্তে দেল বস্ক। এই দলটি যদি সেমিফাইনালের আগেই ছিটকে পড়ে তাহলে স্পেন কেন গোটা বিশ্বই দুঃখিত হবে।

সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে অসাধারণ এক ফুটবল উৎসব উপহার দেয়ার প্রহর গুণছে ব্রাজিল। এখন সময় বলে দিবে তারা সফল, নাকি ব্যর্থ।