
প্রায় সব দেশেই মানুষকে মশা কামড়ায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ কি আছে যেখানে এই রক্তচোষা পোকা একেবারেই নেই?
উত্তর হলো—হ্যাঁ, আছে। সেই দেশের নাম আইসল্যান্ড। আশেপাশের দেশ যেমন নরওয়ে, স্কটল্যান্ড আর গ্রিনল্যান্ডে বহু ধরনের মশা পাওয়া যায়, কিন্তু আইসল্যান্ডে একটিও নেই। (অ্যান্টার্কটিকাতেও মশা নেই, তবে সেটি কোনো দেশ নয়।)
তাহলে এটি কীভাবে সম্ভব হলো যে, আইসল্যান্ডে মশা নেই?
কেন মশা আসেনি?
বিজ্ঞানীরা এর পেছনে কয়েকটি কারণ দেখান। একটি ধারণা হলো, মশা এখনো আইসল্যান্ডে পৌঁছাতে পারেনি। দ্বীপ রাষ্ট্রটি চারদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা, তাই মশার পক্ষে পাশ্ববর্তী কোন দেশ থেকে উড়ে এসে বসতি গড়া খুবই কঠিন।
পুরো ফিচারটি অডিওতে শুনতে ক্লিক করুন
তবে মশা বিমানে চড়ে আসতে পারে। আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিসলি মার গিসলাসন একবার গ্রিনল্যান্ড থেকে আইসল্যান্ডগামী বিমানে একটি মশা ধরেছিলেন। তার মতে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে বসেও মশা কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়াতেও।
কিন্তু যদি মশা আসেও, তারা কেন টিকে থাকতে পারে না?
আবহাওয়াই মূল বাধা
গিসলাসন জানান, মশার ডিম পাড়ার জায়গার অভাব নেই আইসল্যান্ডে। বিমানবন্দরের আশপাশে অনেক জলাভূমি আছে, যা মশার বংশ বিস্তারের জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু আসল সমস্যা হলো এখানকার জলবায়ু।
মশার জীবনচক্রে থাকে চার ধাপ—ডিম, লার্ভা, পিউপা আর পূর্ণাঙ্গ মশা। ডিম থেকে লার্ভা, তারপর পিউপা হয়ে শেষে পূর্ণাঙ্গ একটি মশা তৈরি হয়।

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষক রবার্ট জোন্স বলেন, মশার লার্ভা বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন তরল পানি, যা বরফ না হয়ে থাকে। খুব ঠান্ডা জায়গায় কিছু মশা শীতকালে ডিম হিসেবে বেঁচে থাকে। আবার তুলনামূলক উষ্ণ এলাকায় তারা জমাট না বাঁধা পানিতে লার্ভা বা ডিম অবস্থায় টিকে যায়, কিংবা গর্তে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় শীতকাল কাটায়।
কিন্তু আইসল্যান্ডে শীতকাল দীর্ঘ এবং শরৎ ও বসন্তে বারবার বরফ জমে ও গলে। এই জমা-গলার ধাক্কা মশার ডিম আর লার্ভাকে মেরে ফেলে। ফলে পূর্ণাঙ্গ মশা হওয়ার আগেই তাদের জীবনচক্র ভেঙে যায়।
যদিও আইসল্যান্ডে ভূতাপীয় উষ্ণ প্রস্রবণ আছে, যেগুলোতে বরফ জমে না, কিন্তু সেগুলোর পানি লার্ভার জন্য অনেক বেশি গরম। তাছাড়া সেই পানির রাসায়নিক গঠনও মশার বংশবিস্তারের উপযোগী নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি
তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যদি বসন্ত আর শরৎ উষ্ণ হয়, তবে জমাট না বাঁধা পানির সময়সীমা বাড়বে। এতে মশা টিকে থাকার সুযোগ পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞানী ইম্মো এ বিষয়ে হ্যানসেন বলেন, তুলনামূলক উষ্ণ শীতেকালের কারণে এখন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মশারা উত্তর দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইতিহাসের শিক্ষা
যদি কোনো দিন মশা আইসল্যান্ডে টিকে যায়, তবে তা নতুন কিছু হবে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাওয়াই-তে ১৮২৬ সালের আগে কোনো মশা ছিল না। পরে ইউরোপ ও আমেরিকার জাহাজের মাধ্যমে মশা সেখানে পৌঁছে যায়। হাওয়াইয়ের আবহাওয়া তাদের দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন তারা আরও উঁচু পাহাড়ি অরণ্যেও টিকে আছে।
রোগবাহী মশার ঝুঁকি কম
তবে ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়ানো মশা, যেমন এডিস, আইসল্যান্ডে বসতি স্থাপন করবে—এমন সম্ভাবনা এখনো খুব কম। এসব মশা বেঁচে থাকতে উষ্ণ আবহাওয়া দরকার। যদিও দক্ষিণ ইউরোপে ঝুঁকি বাড়ছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে—২০৮০ সাল পর্যন্ত উত্তর ইউরোপে ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়ানোর মতো পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই।









































