শুক্রবার । ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক রাজনীতি ১১ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৩৫ অপরাহ্ন
শেয়ার

গুমের ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ


salauddin

সিলেটে তামাবিল সীমান্তে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে স্মৃতিচারণ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আবার ফিরেছেন সেই ভয়াবহ স্মৃতিবাহী স্থানে-সিলেটের তামাবিল সীমান্তে। সরকারের উদ্যোগে নির্মিত গুম-খুন বিষয়ক তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে তিনি শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে সেখানে যান এবং নিজের গুম হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন—যে পথ ধরে ২০১৫ সালে তাকে গোপনে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে তার দাবি।

সকাল সাড়ে ৯টার ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছে সালাহউদ্দিন সরাসরি তামাবিল সীমান্তে যান। সেখানে গুমের সময়কার স্মৃতি মনে করে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, “২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় আমাকে চোখ বেঁধে কাদামাটি ও ঝোপঝাড় পেরিয়ে এক অজানা পথে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বুঝতেই পারিনি যে আমাকে সীমান্ত পার করানো হচ্ছে। ভেবেছিলাম, হয়তো ক্রসফায়ারের উদ্দেশে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ এসে মনে হচ্ছে, এই পথ দিয়েই আমাকে ভারতে নেওয়া হয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, পরে তাকে সিঁড়ি বেয়ে কোনো উঁচু জায়গায় তোলা হয় এবং একটি বাড়িতে রাখা হয়, যেখানে ভারতীয় কর্মকর্তারা ইংরেজি ও হিন্দিতে কথা বলছিলেন। তিনি জানান, “শিলংয়ে নিয়ে যখন চোখ খুলে দেওয়া হয়, তখন বুঝতে পারি হয়তো এবার আমাকে ছেড়ে দেবে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে যাই। কিন্তু পরে আমাকে পাগলাগারদে পাঠানো হয়। তখন মনে হয়েছিল, হয়তো জীবনের বাকিটা সময় এখানেই কাটাতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাননি। তিনি শুধুমাত্র সরকারের উদ্যোগে নির্মিত গুম-খুন বিষয়ক তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

তার ভাষায়, “সালাহউদ্দিন আহমদ গুমের সময়কার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকারের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে থাকবে।”

সালাহউদ্দিন সিলেট সফরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন, তবে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। শনিবার রাত ৮টার ফ্লাইটে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। ওই বছরের ১১ ভারতের শিলং শহরে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। প্রায় নয় বছর ভারতে অবস্থানের পর ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন কাজ করছে। দেশে ফেরার ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ৩ জুন সালাহউদ্দিন আহমদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন, যেখানে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করেন।