
হামাসের হাতে অবশিষ্ট জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় সকালে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৩ জিম্মিকে রেড ক্রসের হাতে তুলে দেয় হামাস। এর মাধ্যমে তাদের হাতে জীবিত থাকা মোট ২০ ইসরায়েলি জিম্মির সবাই মুক্তি পেলেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলও মুক্তি দিয়েছে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) বন্দিবিনিময়ের পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করছে। প্রথম ধাপে সকাল ৮টার দিকে সাত জিম্মিকে হস্তান্তরের পর দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৩ জনকে রেড ক্রসের কাছে দেওয়া হয়। পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) নিশ্চিত করে, মুক্তিপ্রাপ্ত সবাই নিরাপদে ইসরায়েলে ফিরেছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় মোট ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২০ জন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৪৮ জনের মৃতদেহও সোমবারের মধ্যে রেড ক্রসের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের মধ্যে রয়েছেন- এলকানা বোহবোট, রোম ব্রাস্লাভস্কি, নিমরোড কোহেন, এরিয়েল কুনিও, ডেভিড কুনিও, এভিয়াটার ডেভিড, ম্যাক্সিম হারকিন, ইতান হর্ন, সেগেভ কালফন, বার কুপারশটাইন, ইউসুফ হাইম ওহানা, আভিনাতান ওর ও মাতান জাঙ্গাউকার।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি জানিয়েছে, বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে এক হাজার ৭১৮ জন ফিলিস্তিনির নাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। আলজাজিরার সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পৌঁছানো বন্দিবাহী বাসগুলোর চারপাশে উল্লসিত জনতা পতাকা নাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে।
এদিকে, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। সোমবার মিসরের পর্যটননগর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তাঁরা এ চুক্তিতে সই করেন।
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকারি উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে জিম্মি মুক্তির দৃশ্য সরাসরি টেলিভিশনে দেখেছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর নতুন উত্তেজনার খবরও পাওয়া গেছে। গাজা সিটিতে হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় ইসরায়েলপন্থী দুগমুশ পরিবারের সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযানের পর এটি গাজায় শুরু হওয়া সবচেয়ে সহিংস অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষগুলোর একটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামাসের মুখোশধারী যোদ্ধারা জর্দানীয় হাসপাতালের কাছে ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আল-শিফা হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণে তিন শিশু আহত হওয়ার খবরও নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্পের ভাষণ বন্ধ করতে গেলে দুই এমপি—ওফের কাসিফ ও আয়মান ওদেহকে সভা থেকে টেনে বের করে দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। আয়মান ওদেহ বলেন, “আমরা শুধু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চেয়েছিলাম- যে দাবিতে গোটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস জানিয়েছেন, রাফা সীমান্ত ক্রসিং মনিটরিংয়ে অংশ নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি এক্সে এক পোস্টে বলেন, “গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে এক জটিল কিন্তু অপরিহার্য কাজ।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও আহ্বান জানিয়েছেন, “এই সুযোগে স্থায়ী শান্তির পথে এগিয়ে যাক বিশ্ব।”
সূত্র: আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স।





































