ধর্ষণের পর ৪২ বছর ধরে কোমায় ছিলেন সেবিকা অরুণা শানবাগ। আজ সোমবার মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। এই হাসপাতালেরই সেবিকা ছিলেন অরুণা। এখানেই তাঁর ওপর বর্বর হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৩ সালে। অরুণার বয়স তখন ২৬ বছর। ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী সোহনলাল ভারতা বাল্মিকী ধর্ষণ করেন অরুণাকে। ধর্ষণের পর কুকুর বাঁধার শেকল দিয়ে অরুণার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা চালানো হয়। পরে ফেলে রাখা হয় হাসপাতালের বেসমেন্টে। ১১ ঘণ্টা সেখানেই পড়ে ছিলেন অরুণা। উদ্ধারের সময়ও অরুণার গলায় শেকল বাঁধা ছিল। এতে তাঁর মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন অরুণা।
কয়েক দিন আগে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) অরুণাকে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, অরুণা ফুসফুসের প্রদাহে ভুগছিলেন। তাঁকে শ্বাসপ্রশ্বাস চলানোর কৃত্রিম ব্যবস্থার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল।
এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, হাসপাতালের দত্তক নেওয়া পশুদের জন্য বরাদ্দ করা খাবার চুরি করতেন বাল্মিকী। এ কারণে অরুণা প্রায়ই তাঁকে বকাবকি করতেন। এরপর তিনি এ ঘটনা ঘটান।
অরুণার এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে ‘অরুণাস স্টোরি’ নামে একটি বই লেখেন পিংকি ভিরানি। ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ভিরানি কোমায় থাকা অরুণার খাবার বন্ধ করে তাঁকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান কর্মীরাও চেয়েছেন অরুণা এভাবেই বেঁচে থাকুন।
৪২ বছর ধরে হাসপাতালের সেবিকারা পরম যত্নে রেখেছেন অরুণাকে। এত দিন বিছানায় থাকার পরও অরুণার পিঠে কোনো ক্ষত তৈরি হয়নি। সেবিকারা তাঁর ডায়াপার বদলে দিতেন, খাওয়াতেন। অরুণা ছটফট করলে তাঁকে আরাম দেওয়ার চেষ্টা করতেন। হাসপাতালের নিচতলার একটি কক্ষে অরুণাকে রাখা হয়। সেখানে সব সময়ই কয়েকজন তাঁর সেবা করতেন।