Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হচ্ছে না এ বছর

shahjalal-airportনানামুখী জটিলতার কারণে দেড় বছরেও শুরু করা যায়নি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। সর্বশেষ টার্মিনালের কাজ শুরুর কথা ছিল এ মাসের (নভেম্বর) প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু দীর্ঘ আইনি জটিলতার কারণে বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না। এখন আর তেমন কোনো জটিলতা নেই। পরিবর্তিত পরিকল্পনা ও নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, দিন তারিখ নির্ধারণ না করা হলেও এতটুকু বলা যায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হবে।

chardike-ad

থার্ড টার্মিনাল পরিকল্পনায় আসছে বারবার পরিবর্তন। ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতাসহ নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। মূলত এসব জটিলতার কারণে গতি পায়নি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এসব জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখনও চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। চুক্তি সম্পন্ন হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থার্ড টার্মিনালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বেবিচক-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান।

তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরুর জন্য বেবিচকের প্রকল্প পরিচালকের দফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর। সহসাই এর ফলাফল দৃশ্যমান হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। ২০১৭ সালে ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

এছাড়া সব ধরনের সাপোর্ট দেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে বিদেশি সংস্থা, অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বেবিচকের সমন্বয়ে বেশ কিছু কমিটি গঠন করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কমিটিগুলো আলাদাভাবে ছাড়াও সমন্বয় সভা করেছেন বেশ কয়েকটি।

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আইনি জটিলতায় পড়তে হয় বেবিচককে। বিমানবন্দর এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জমি লিজ দেয়া ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিলে আদালতে মামলা করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৭ সালের ১১ জুন। চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, জাপানের নিপপন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনস্যালটেন্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনস্যালটেন্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনস্যালটেন্টস লিমিটেড। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বেবিচকের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বেবিচক ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিলে তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। যদিও নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।

১৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর একটি হচ্ছে মিৎসুবিশি, অন্যটি সিমুজি। দু’টি আবেদনই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়াম করে জমা দিয়েছে। মিৎসুবিশির সঙ্গে আছে ফুজিতা ও স্যামসাং। আর সিমুজি’র সঙ্গে আছে, ইটালথাই ও জেজিইসি।

প্রথমে দু’টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের টেকনিক্যাল মূল্যায়ন করা হয়। টেকনিক্যাল মূল্যায়নে দু’টি প্রতিষ্ঠানের মান প্রায় একই অবস্থানে থাকলেও আর্থিক মূল্যায়নে এগিয়ে আছে মিৎসুবিশি। টার্মিনাল নির্মাণে মিৎসুবিশি খরচ দেখিয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে সিমুজি দেখিয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৪ বছর। থার্ড টার্মিনালের ভবন হবে তিন তলা। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই ভবনটির নকশা করেছেন স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট বেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। থার্ড টার্মিনালের বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস (স্ব-সেবা) চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে।

এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে।

অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য ৪টি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে প্রকল্পের প্রথম ধাপে কোনও যোগযোগ ব্যবস্থা থাকবে না। তবে প্রকল্পের ২য় ধাপে কানেকটিং কোরিডোরের মাধ্যমে পুরোনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য শাহজালালে পৃথক ভিভিআইপি কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটি ভেঙে ফেলা হবে। তবে, তৃতীয় টার্মিনালে পৃথকভাবে স্বতন্ত্র কোনও ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস থাকবে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ