Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তিন শ্রেণীর লোক সাদা চুল কালো করতে পারবে

mizanur-rahmanচুলে ও দাড়িতে খেজাব বা কলপ করার বিধান

১) চুলে খেজাব বা কলপ করার বিধান।
২) চূল ও দাড়ীতে কালো রং লাগানো হারাম এবং
৩) অল্প বয়সে চুল পাকলে করণীয়।

chardike-ad

মূলকথা হলো, ইসলামী শরীয়াতে পাকা চুলে কাল খেজাব বা কলপ ব্যবহার করা হারাম। চুলকে কাল রঙে রঞ্জিত করা হারাম। হাদিসে কাল খেজাব বা কলপ সম্পর্কে যে হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে তাতে একথাই প্রমাণিত হয়।

এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “শেষ যামানায় একদল লোক কবুতরের বুকের রঙের ন্যায় কাল খেজাব বা কলপ ব্যবহার করবে । আর এ কারণেই তারা জান্নাতের কোন সুগন্ধিও পাবে না।” ***আবু দাউদ: ৪/৪১৯; আহমদ, নাসায়ী, আবু দাঊদ: ৪২১২; জামে: ৮১৫৩।

অনেক চুল পাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কাল রঙ দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদেরকে যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সী যাহির করে। এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা (“আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই” [সুরা রুম; আয়াত: ৩০:৩০])

ও মিথ্যা আত্ম তৃপ্তি ছাড়া আর কোন কিছুই হয় না। এর ফলে ব্যক্তিগত চালচলনের উপর নিঃসন্দেহে এক প্রকার কুপ্রভাব পড়ে। আর অন্য মানুষ এতে প্রতারিত হয়। নাবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাকা চুলে খেজাব লাগাতে বলেছিলেন মেহেদী বা এ ধরনের কোন জিনিস দ্বারা, যাতে হলুদ, লাল ইত্যাদি মৌলিক রঙ ফুটে ওঠে। তবে কাল রঙ দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই খেজাব লাগানোর অনুমতি দেন নাই।

আবু বকর (রা:)-এর পিতা আবু কুহাফা (রা:)-কে মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে হাজির করা হয় তখন তাঁর চুল দাড়ি এত সাদা হয়ে গিয়েছিলো যে, তা সাগামা অর্থাৎ কাশ ফুলের ন্যায় ধবধবে দেখাচ্ছিল। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বলেছিলেন: “তোমরা কোন কিছু দ্বারা এটা পরিবর্তন করে দাও। তবে কাল রঙ থেকে বিরত থাকো।”
***মুসলিম: ৩/১৬৬৩।

খেজাব মানে সাদা চুলে কালো রং লাগানো। চুল, দাঁড়িতে কালো রং ব্যতীত যে কোন রঙের খেজাব লাগানো সুন্নাত। যেমন, জাবির (রাযিঃ) বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফা [আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-এর পিতা] সাদা ধবধবে চুল, দাঁড়ি নিয়ে রাসুল (সাঃ)-এর সামনে আসলেন। নবী (সাঃ) তাঁকে বললেনঃ
“এগুলিকে কোন কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর। তবে কালো রং থেকে বিরত থাকো বা ব্যতীত।” ***মুসলিম, মিশকাত: ৩৮০ পৃঃ।

রাসূল (সা:) বলেছেন: “মেহেদীর রং হল সর্বোত্তম খেজাব।” ***আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত: ৪৪৫১।

উল্লেখ্য যে, নারীদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান পুরুষদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান একই। কোন তফাৎ নাই।

এই দুনিয়াতে আমাদের মধ্যে নিষিদ্ধ যে কোন বস্তুর প্রতি আকর্ষণ যে কোন সিদ্ধ বা হালাল বস্তুর তুলনায় অতুলনীয় ভাবে বেশী। সকল রঙকে চুলে লাগানোর জন্য বৈধ করা হয়েছে মাত্র একটি রঙ (কালো) বাদে। অথচ এই একটি রঙের প্রতি আকর্ষণ অন্য সকল রঙের তুলনায় হাজারো গুন বেশী। ইচ্ছা করলেই আমরা শরীয়াত বিরোধী এ কাজ থেকে বেচে থাকতে পারি।

হাদিসে এসেছে যে. মুসলিম/মুমিনের একটি চুল সাদা হলে একটি গোনাহ ঝরে যায়, একটি নেকী ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং মহান আল্লাহর রহমত লাভ হয়।

পাকা চুল ও দাড়িতে রহমত ও বরকত:
পাকা চুল ও দাড়ি উঠানো যাবে না। কারণ,
রাসূল (সা:) বলেছেন:
‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হ’ল মুসলমানের জ্যোতি। কোন মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লিখেন, একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি পাপ মোচন করেন।’
***নাসাঈ, মিশকাত: ৪৪৫৮ ‘সনদ হাসান’।
অন্য বর্ণনায় আছে:
‘পাকা চুল মুসলমানদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর হবে।’
***তিরমিযী: ১৬৩৫, মিশকাত: ৪৪৫৯ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘চুল আঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ।

সুতরাং এগুলি উপড়ানোর কোন সুযোগ নেই।

মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।
চূল ও দাড়ীতে কালো রং লাগানো হারাম
আমি নিজেকে দিয়েই শুরু করছি। অনেক বছর হলো আমার মাথার কিছু চূল এবং দাড়ী সাদা রং ধারন করেছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের যে দেশেই আমি অবস্থান করেছি এবং করছি সেখানকার নাপিতরা অনেক চেষ্টা করেছে চূলের সাদা রং কে কালো করে দেওয়ার। কিন্তু আমার সাদা চূল ও দাড়ী আজ অবধিও কেউ কালো করে দিতে পারে নাই। অবশ্য আমি নিজে আমার মাথার চুলে পাতার মেহেদি লাগিয়েছি যদিও বেশী চূল সাদা হয় নাই। আমি অনেক বছর আগে থেকেই জেনেছিলাম যে, সাদা চূল ও দাড়ীকে অন্য রং ব্যতীত কালো রং করা বড় গোনাহের কাজ। সেই থেকে মহান আল্লাহ আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছেন।

আমাকে যদি কেউ সারা দুনিয়ার সকল সম্পদও দেয় তবুও আমার একটি সাদা চূলকে কালো রং এ পরিবর্তন করতে পারবে না ইন-শা-আল্লাহ। শুধু তাই নয়, অনেকেই সাদা চূলকে উপড়ে ফেলে বা তূলে ফেলে। আমি আজ অবধিও কোন সাদা চূল জ্ঞান থাকাবস্থায় তূলে ফেলিনি বা উপড়িয়ে ফেলি নাই। কারন, আমি জানি যে, আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই এবং আমি এই মুহূর্তেও দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারি। আমি যত পাপীই হই না কেন, আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে কিভাবে যাবো?

অনেক মসজিদের ইমামদের দেখেছি তারা চূলে কালো রং লাগিয়ে মিম্বরে দাড়িয়ে আল্লাহর কালাম পাঠ করে। আসলে তারা অনেক যুক্তি দেখায় যে, একটূ সমস্যা আছে তাই কালো রং লাগিয়েছি। আসলে তাদের তাকওয়া নেই। তারা দুনিয়াকে লোভনীয় হিসাবে ধারন করেছে এবং দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা অন্তরে ধারন করতে পারে নাই।

আমি এটুকু বুঝতে পারি যে, আজকে যদি সাদা চূলকে কালো রং বানিয়ে নেই তাহলে কয়েকদিন পরে আবার সেই চূলগুলো সাদা হয়ে যাবে। সাদা চূলকে কেউই চিরদিনের জন্য কালো বানিয়ে দিতে পারবে না। মুমিনদের জন্য সাদা চূল হলো মহান আল্লাহর রহমত এবং যার যার জীবনের পরিসমাপ্তির ইংগিত বহন করে। হাদিসে সাদা চূলকে অন্য রং ব্যতীত কালো রং লাগানোকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
“তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
***সূরা রুমঃ আয়াতঃ ৩০:৩০।

এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বলতে প্রকৃতিগতভাবে মহান আল্লাহর সৃষ্ট সকল সৃষ্টিকেই বুঝানো হয়েছে। যেমনঃ সাদা, কালো চূল-দাড়ীও প্রকৃতিগতভাবে মহান আল্লাহর সৃষ্টি এবং কোন সৃষ্টিরই পরিবর্তন করা হারাম।

রং দিয়ে চুল- দাড়ী রঙ্গানোর হাদিসসমূহঃ
চুল বা দাড়ীতে কালো রং লাগানো একটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু সাদা চুল-দাড়ী মেহেদি বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী (সাঃ)- এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন।

আবু হুরায়রা (রাদিঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
“ইয়াহুদী ও নাসারারা চুল ও দাড়ীতে খেযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর”।
***বুখারীঃ অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বিয়া।
কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা এ আদেশ অমান্য করে কালো রং দিয়ে খেজাব (কলপ) লাগাবে।

নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
“আখেরী যামানায় একদল লোকের আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ী কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জন্নাতের গন্ধও পাবেনা”।
***আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তারাজ্জুল, আলবানী (রহিঃ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদীসের ভাষ্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পুরুষদের মাঝে দাড়ী ও মাথার চুল কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
“অর্থাৎ শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা (চুল বা দাড়ীতে) কালো রং লাগাবে। যা দেখতে কবুতরের পেটের ন্যায়। তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”।

***আবু দাউদঃ ৪২১২; নাসাযঈঃ ৫০৭৭।
কারোর মাথার চুল বা দাড়ী সাদা হয়ে গেলে তাতে কালো ছাড়া যে কোন রং লাগানো সুন্নাত।

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
“মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর (রাদিঃ) এর পিতা ) আবূ কোহাফাহকে (রাসূল (সাঃ) এর সামনে উপস্থিত করা হলো । তখন তার মাথায় চুল ও দাঁড়ী সাদা ফল ও ফুল বিশিষ্ট গাছের ন্যায় দেখাচ্ছিলো। তা দেখে রাসূল (সাঃ) সাহাবাদেরকে বললেনঃ তোমরা কোন কিছু দিয়ে এর রং পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং কিন্তু লাগাবে না”।

***আবু দাউদঃ ৪২০৪; নাসাঈঃ ৫০৭৮।
তবে রাসূল (সাঃ) সাধারণত মেহেদি, জাফরান ও অর্স (লাল গোলাপের রস) দিয়ে রং করতেন।

আবূ রিমসাহ (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
আমি ও আমার পিতা রাসূল (সাঃ) – এর কাছে আসলে তিনি আমার পিতাকে বলেনঃ এ ছেলেটি কে? তখন আমার পিতা বললেনঃ সে আমারই ছেলে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তুমি তার সাথে অপরাধমূলক আচরণ করো না । হযরত আবূ নিমসাহ বলেনঃ তখন তাঁর দাড়ী মেহেদি লাগানো ছিলো।
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ
“নবী (সাঃ) চামড়ার জুতো পরিধান করতেন এবং অর্স তথা লাল গোলাপের রস ও জাফরান দিয়ে দাঁড়িটুকু হলুদ করে নিতেন”।
***আবূ দাউদঃ ৪২১০।

রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
“নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যা দিয়ে বার্ধক্যের সাদা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায় তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়”।
***আবূ দাউদঃ ৪২০৫; নাসাঈঃ ৫০৮০।
উল্লেখ্য যে, কালো রং দিয়ে কলপ বা খেজাব লাগানোর যে হাদিস বলা হয় তা সবই জাল।
[অসমাপ্ত]

অল্প বয়সে চুল পাকা ও করনীয়:
অল্প বয়সে চুল পাকে নিচের কারণগুলোতে:
১) স্পাইসি ফুড বেশী খাওয়া।
২) ঘুম কম হওয়া।
৩) চুলের যত্ন না করা।
৪) কম দামী হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা এবং
৫) জেনেটিক বা হরমোনের সমস্যা।

অল্প বয়সে চুল পাকলে করনীয় কিছু পরামর্শ: বংশগত হলে, অর্থাৎ আপনার বাবা-চাচা-কাকা-দাদার মত করে আপনারও চুল দ্রুত সাদা হয়ে পরলে ব্যাপারটা একটু কঠিন।

আর তা না হলে, এগুলো মেনে চলুনঃ
১) অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা করবেন না।
২) অতিরিক্ত চা-কফি-ড্রিংক্স খাবেন না।
৩) বেশী তেলযুক্ত খাবার খাবেন না। বেশী মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না।
৪) বেশী টক বা এসিডিক খাবার খাবেন না।

এগুলো খাবেনঃ
আটার রুটি, সিরিয়াল, মাংস সব ধরনের, সয়া, গাঢ় সবুজ সবজি, হলুদ ফলমূল, সবুজ শাক, কলা, টমেটো, ফুলকপি, গরু-খাশির কলিজা-ফুসফুস, দই, পাউরুটি, কাজু-পেস্তা আর কাঠ বাদাম, ডিম, চিংড়ি মাছ, গাজর।