দেশব্যাপী জেলা -উপজেলায় মাহফিলে বক্তব্য দিতে নিষিদ্ধ হচ্ছেন সময়ের জনপ্রিয় ও সমালোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আযহারী। নিরাপত্তাজনিত কারণে ও কোনোরকম বিপত্তিকর ঘটনা এড়াতে সম্প্রতি ফেনী ও চাঁদপুরে আযহারীর মাহফিল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় জেলা প্রশাসন। তবে এসব ঘটনার ভিন্নতা দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায়।
সেখানে ১৬ ডিসেম্বরে ঐতিহ্যবাহী পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার ১৩তম ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে মিজানুর রহমান আযহারী নির্বিঘ্নে মাহফিল করেছেন। তার ওয়াজ শুনতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগম ঘটে ও বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেই মাহফিল। মহান বিজয় দিবসের দিন মাদ্রাসার পাশের বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলের মূল আকর্ষণই ছিলেন প্রধান বক্তা ড. মিজানুর রহমান আযহারী।
মাহফিলের আয়োজক কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, মাফফিলে যোগ দিতে ১৫ ডিসেম্বর সকাল থেকেই দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা আসতে থাকেন। বাস-ট্রাক, মাইক্রো-মিনিবাস, সিএনজি-অটো, মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের ছোট-বড় যানবাহনযোগে মাহফিলে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জড়ো হন। বিশালাকার প্যান্ডেলের প্রস্তুত রাখা হলেও মাঠ ছাপিয়ে মুসল্লিদের আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার পর বয়ান শুরু করতে মাহফিলমঞ্চে ওঠেন প্রধান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। এ সময় তাকে কাছ থেকে একনজর দেখতে খানিকটা উত্তাল হয়ে ওঠে মাহফিলে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
টানা ১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ধরে পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন তিনি। নারীর মর্যাদা, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কোরআন নাজিল, ইসলামের দাওয়াত ও মহান বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য দেন আযহারী।
তার আলোচনা শেষে মোনাজাতের আগমুহূর্তে পবিত্র কোরানকে ভালোবেসে ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে পবিত্র কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন রনি কুমার দাস নামের এক হিন্দু যুবক।
স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং কোনো চাপের মুখে না পড়ে তিনি ধর্মান্তরিত হতে চাচ্ছেন বলে জানালে মিজানুর রহমান আযহারী তাকে পবিত্র কালেমা পাঠ করান। ইসলাম গ্রহণের পর ওই যুবকের নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জে। তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণির দর্শন বিভাগের ছাত্র।
মাহফিলের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ, র্যাব, আনসার, গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয় কয়েক শ’ স্বেচ্ছাসেবক। সশরীরে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।
এছাড়াও মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদ্রাসার পরিচালক সাহিদুজ্জামান তরিক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন,চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু ও জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।